জাতীয়

রংপুরে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা, দাওয়াত পাননি স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

নগর খবর ডেস্ক : রংপুরে সংসদীয় ছয়টি আসনে প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এতে বাড়তি উৎসাহ-উদ্দীপনা বাড়ানোসহ দল মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী জনসভায় মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) আসছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরে প্রথমে তারাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ মাঠে রংপুর-২ (তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জ) আসনের নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউকের এবং শেষে পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনের প্রার্থী স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য দেবেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর আগমন ও নির্বাচনী প্রচারণা ঘিরে এ দুটি সভায় ব্যাপক জনসমাগম হবে বলে আশাবাদী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। এ জন্য ব্যাপক প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। তবে অভিযোগ উঠেছে, জনসভায় দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাউকে ডাকা হয়নি। যা নিয়ে অনেকেই ক্ষুব্ধ হলেও প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করতে মাঠে থাকার কথাও জানিয়েছেন ।

রংপুরের ছয়টি আসনের মধ্যে রংপুর-১ আসনে দল মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু এবং রংপুর-৩ আসন থেকে তুষার কান্তি মণ্ডলের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ দুটি আসনের মধ্যে রংপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোটে লড়ছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবলু। অন্যদিকে রংপুর-৪ (পীরগাছা ও কাউনিয়া) আসন ছাড়া বাকি তিনটিতেই রয়েছে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী। এতে করে স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগে তৈরি হয়েছে অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ। সঙ্গে নেতাদের মান-অভিমানের প্রভাব পড়ছে দলের নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেও।

এদিকে রংপুর-১, ২, ৫ এবং ৬ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ছাড়াই দলীয় নির্বাচনী জনসভায় সফল করতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দুটি জনসভার প্রস্তুতি বিষয়ে অধ্যাপক মাজেদ আলী বাবুল জানান, রংপুর জেলা আওয়ামী লীগ সবসময় প্রস্তুত। আশা করছি প্রধানমন্ত্রীর দুটি নির্বাচনী সভায় বিপুল জনসমাগম হবে। বেলা ১১টায় তারাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ মাঠে এবং বেলা তিনটায় পীরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জনসভায় বক্তব্য রাখবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা।

দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রধানমন্ত্রীর জনসভা মঞ্চে থাকবেন কিনা এর জবাবে সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া বলেন, এই জনসভা নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নির্বাচনী জনসভা। সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের থাকার কোনো প্রশ্নই উঠে না। যদি কেউ দলের কর্মী হিসেবে মাঠে থাকেন, সেটিও তার দলীয় দায়িত্ব। কিন্তু জনসভা মঞ্চে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রতীকের প্রার্থীর উপস্থিতি দলের নেতারা আশা করেন না।

পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র তাজিমুল ইসলাম শামীম বলেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে আমাদের পীরগঞ্জ তথা রংপুরের পুত্রবধূ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুভাগমন সফল করতে আমরা সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছি। এই জনসভা নৌকা প্রতীকের প্রার্থী স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর। আমরা পীরগঞ্জ উপজেলা এবং জেলা আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা এই জনসভাকে জনসমুদ্রে রূপ দিতে কাজ করছি।

প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে উজ্জীবিত ভোটার ও প্রার্থীরা। তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীকে দেখার জন্য অধীর আগ্রহে আছে ভোটারসহ সাধারণ মানুষ। রংপুর-৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পীরগঞ্জে আসবেন, এই বিষয়টাকে কেন্দ্র করে পীরগঞ্জবাসী খুবই উল্লসিত এবং ব্যাপক আগ্রহ, উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে তারা অপেক্ষা করছেন।

এদিকে জনসভায় ডাক না পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনের আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জাকির হোসেন সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাকে কেউ প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় অংশ নেওয়ার বা থাকার জন্য বলেনি। আমি তো দীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি। উপজেলার চেয়ারম্যান ছিলাম। দলের মনোনয়ন চেয়েছিলাম কিন্তু পাইনি। দলের মনোনয়নবঞ্চিতদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে প্রধানমন্ত্রী উৎসাহ ও সাহস যুগিয়েছেন। আমি স্বতন্ত্র হয়ে ভোট করলেও দলের মধ্যে আছি। জনসভায় থাকার জন্য দাওয়াত পাব, এমন আশা তো করতেই পারি।

আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বদরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রংপুর-২ (তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জ) আসনের বিশ্বনাথ সরকার বিটু বলেন, প্রধানমন্ত্রী রংপুরে আসবেন এটা তো আমাদের সবার আনন্দের বিষয়। এতে দলীয় নেতাকর্মীরা আরও বেশি উজ্জীবিত হবেন। সাধারণ মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ বাড়বে। আমি চাই সফলভাবে নির্বাচনী জনসভা সম্পন্ন হোক। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ছি। আমাকে নিয়ে বিভিন্ন রকমের ষড়যন্ত্র হতে পারে। জনসভায় মাঠে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আমার ওপর দায় চাপাতেও পারে। এ কারণে আমি তারাগঞ্জের জনসভায় থাকব না। তবে দলীয় নেতারা সুযোগ দিলে আমি পীরগঞ্জের জনসভায় যেতে পারি।

স্বতন্ত্র প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেওিয়া একই আসনের আওয়ামী লীগ নেতা সুমনা আক্তার লিলি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসবেন, এতে সবখানে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। সেখানে আমি জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এবং ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবেও কারও কাছ থেকে দাওয়াত পাইনি। আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলাম কিন্তু পরে নির্বাচন থেকে সরে এসেছি। তারপরও আমাকে এখন পর্যন্ত কেউ জনসভার ব্যাপারে কিছু বলেনি।

এদিকে রংপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক বলেন, আল্লাহর অশেষ রহমত প্রধানমন্ত্রী রংপুরে আসছেন। আমরা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিচ্ছি। আশা করছি বিপুল লোকসমাগম হবে। গণতন্ত্র, উন্নয়ন এবং নৌকার পক্ষে যে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে, তা ৭ জানুয়ারি জনগণ ভোটের মাধ্যমে আবারো প্রমাণিত করবে।

২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও প্রধানমন্ত্রী এই দুটি আসনের নির্বাচনী সভায় বক্তব্য দিয়েছিলেন। তিনি সবশেষ এ বছরের ২ আগস্ট রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভায় বক্তব্য রাখেন। এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুরের ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে রংপুর-২ আসনে আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক, রংপুর-৪ আসনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, রংপুর-৫ আসনে রাশেক রহমান ও রংপুর-৬ আসনে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী দলীয় প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান জানান, রংপুর জেলার ছয়টি আসনে দলীয় ও স্বতন্ত্র মিলে ৩৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে রংপুর-১ আসনে নয়জন, রংপুর-২ আসনে তিনজন, রংপুর-৩ আসনে ছয়জন, রংপুর-৪ আসনে তিনজন, রংপুর-৫ আসনে আটজন এবং রংপুর-৬ আসনে সাতজন প্রার্থী। তফসিল অনুযায়ী নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত চলবে। ভোটগ্রহণ আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি (রোববার) অনুষ্ঠিত হবে।

Back to top button