আমরা প্রত্যেক বাংলা মাসে একটি করে পূর্ণিমা আর একটি করে অমাবস্যা পাই। অমাবস্যা, অর্থাৎ যে দিন আকাশে চাঁদ দেখা যায় না। যদিও অমাবস্যা হওয়ার মূলে একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক কারণ আছে, তাও আমরা হিন্দু শাস্ত্র মতে এই অমাবস্যার দিন কয়েকটি কাজ করা আর কয়েকটি কাজ না করায় বিশ্বাসী। এগুলির মূলে কোনও শক্ত বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে কিনা তা নিয়ে যদিও সংশয় আছে, তাও অনেকেই অমাবস্যার দিন কয়েকটি কাজ না করায় বিশ্বাসী। আসুন জেনে নিই সেই কাজগুলি কী কী।
অমাবস্যার দিন অনেকেই অনেক কিছু করতে মানা করে থাকেন। আগেকার দিনে এগুলো খুবই মেনে চলতো মানুষজন। কেন মানত তা তাদের বিশ্বাস বলা যেতে পারে। বিশেষ করে যে যে কাজ তারা করতো না তা আগে জেনে নিন। এরকম নয় যে এখন মানে না কেউ। অনেকেই মানেন।
অমাবস্যার দিন বলা হয় নখ কাটতে নেই। তন্ত্র মতে আমাদের শরীরকে অনেক সময়ে নদীর সঙ্গে তুলনা করা হয়। অমাবস্যার দিন এই নদীর প্রবাহ নাকি নিম্নগতি পায়, অর্থাৎ আমাদের পায়ের দিকের অংশ বেশি প্রভাবিত হয়। এর ফলেই বলা হয় অমাবস্যার দিন নখ কাটতে নেই। আর অমাবস্যায় মারণ-উচাটনের মতো কাজও হয় যাতে এই নখ ব্যবহার করা হয়। তাই নখ যাতে না পাওয়া যায় সহজে এই দিন তাই নখ কাটতে বারণ করা হয়।
বলা হয় অমাবস্যার দিন নাকি অশুভ শক্তির প্রভাব বাড়ে। তাই এই দিন আমাদের বাড়ির দরজার সামনে অন্ধকার করে রাখতে নেই। মূল দরজার কাছে দুটি তিলের তেলের প্রদীপ জ্বালাতে হয়। এর ফলে অশুভ শক্তির প্রভাব কমে।
সংস্কার অনুযায়ী, অমাবস্যায় যেহেতু অশুভ শক্তির প্রভাব বাড়ে, তাই এই সময়ে ঘর অপরিষ্কার রাখতে নেই। অপরিষ্কার ঘরে নাকি অশুভ শক্তির প্রভাব পড়ে বেশি। তাই ঘর সুন্দর করে গুছিয়ে রাখুন। সব আবর্জনা সরিয়ে দিন। এঁটো বাসন পরিষ্কার করে নিন।
এই দিন কোনও শুভ কাজ না করার পরামর্শই দেওয়া হয়। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে তিথির উপর সব সময়ে নির্ভর করলে চলে না। কিন্তু আপনার যদি একান্তই দরকার না থাকে, বা যদি একান্তই কাজ পিছিয়ে দেওয়ার অবস্থা থাকে, তাহলে এই দিন দূরে কোথাও যাত্রা না করাই ভালো। আর নতুন কোনও কাজ শুরু করাও ঠিক নয়।
পূর্ণিমার মতো অমাবস্যার এই দিনেও অনেকে বলেন আমিষ না খেতে। এই দিনটা যেহেতু অনেকে সাত্ত্বিক ভাবে কাটাতে চান, তাই এই দিন উপোস করেন অনেকে। আপনি উপোস না করতে চাইলেও নিরামিষ খাবার খেতে পারেন।
আমাদের শাস্ত্রে গর্ভ ধারণের জন্য নির্দিষ্ট শুভ দিন বলে দেওয়া হয়েছে। যদিও আজকের দিনে আমরা সেই সব মানি না। কিন্তু অমাবস্যার দিন গর্ভ ধারণ করা, বা সাধারণ ভাবে আমরা যদি বলি সেক্স করা, সেটা করা যাবে না। এটি কিন্তু এখনও অনেকে মেনে চলেন।
দেখুন আমরা অনেকেই অনেক কিছু বিশ্বাসের উপর ভর করে করে থাকি। কিন্তু কিছু কিছু সময়ে কিছু সংস্কার কিন্তু বৈজ্ঞানিক ভিত্তির সঙ্গে মিলে যায়।
যেমন ধরুন, গ্রামের দিকে এখনও নখ কাটা হয় না এই দিন।
আসলে গ্রামে তো এখনও অনেক জায়গায় ভালো করে আলোর ব্যবস্থা হয়নি। সেখানে এমনিই কুপির আলো আর চাঁদের আলোই ভরসা।
অমাবস্যায় যেহেতু চাঁদের আলো থাকে না, তাই নখ কাটতে সমস্যা হতে পারে, আঙুল কেটে যেতে পারে। তাই নখ কাটা হয় না।
আবার অন্ধকার বলেই কাটা নখ ঠিক করে পরিষ্কার করা যাবে না, তা ঘরে চলে আসতে পারে। এর পাশাপাশি আমাদের দরজা সব সময়েই আলোয় ভরিয়ে রাখা উচিৎ, কারণ আমরা সেখান দিয়ে যাওয়া আসা করি। সেখানে আলো না থাকলে আমরা পড়ে যেতে পারি।
আর ঘর পরিষ্কার তো সব সময়েই রাখা উচিৎ। এগুলো খুবই সাধারণ বুদ্ধি দিয়ে ভাবলেই করা যায়।
আসলে অমাবস্যার দিন কিছু করা আর না করা পুরোটাই আপনার বিশ্বাস। এটির মূলে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি খোঁজা তাই খুব একটা ঠিক কাজ হবে না।