নগর খবর ডেস্ক : ইসরায়েলে বিতর্কিত বিচারিক সংস্কার বাতিল করে দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। বিতর্কিত এই বিচারিক সংস্কারের পরিকল্পনা গত বছর বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকারের বিরুদ্ধে ইসরায়েলজুড়ে বিক্ষোভের সূত্রপাত করেছিল।
সেই সংস্কার পরিকল্পনায় সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা কমানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
ইসরায়েলের বিচার ব্যবস্থাকে সংশোধন এবং সুপ্রিম কোর্টকে দুর্বল করার গত বছরের শুরুতেই একটি পরিকল্পনা উন্মোচন করে নেতানিয়াহুর সরকার। এসব সংস্কার বাস্তবায়ন হলে ইসরায়েলের পার্লামেন্টের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের রায়গুলোকে বাতিল করা সহজ হবে।
সমালোচকরা বলছেন, এটি বিচার ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেশের গণতন্ত্রকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। বর্তমান নেতানিয়াহু সরকারকে ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে ডানপন্থি সরকার হিসেবে দেখা হয়।
টানা কয়েক মাসের অভ্যন্তরীণ অশান্তির পর ২০২৩ সালে সরকারের গৃহীত এই আইনটি বাতিল করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত নিলো। মূলত গত বছরের জুলাই মাসে সরকার আইনটি পাস করে। তবে এই আইনটি ইসরায়েলে ব্যাপক ক্ষোভ ও বিভাজন সৃষ্টি করে।
কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী এই সংস্কার বাতিল করার আহ্বান জানিয়ে রাস্তায় নামেন এবং প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবি জানান তারা। বিক্ষোভের আয়োজকরা বলেছেন, সাপ্তাহিক এই বিক্ষোভগুলো ছিল ইসরায়েলের ইতিহাসে রাস্তায় হওয়া সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ।
সেই সময়ে বিমান বাহিনীর পাইলটসহ শত শত সংরক্ষিত সেনা কাজ করতে অস্বীকার করার হুমকি দিয়েছিল। যার ফলে সতর্ক করা হয়েছিল, এটি ইসরায়েলের সামরিক সক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
সুপ্রিম কোর্টের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ১৫ জনের মধ্যে ৮ জন বিচারক এই আইনের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন। এতে আরও বলা হয়েছে, এই সংস্কার পরিকল্পনা ‘গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে ইসরায়েল রাষ্ট্রের মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলোর গুরুতর এবং অভূতপূর্ব ক্ষতি’ করেছে।
এদিকে ইসরায়েলের বিচারমন্ত্রী এবং আইনটির প্রধান কারিগর ইয়ারিভ লেভিন বিচারকদের ‘সমস্ত ক্ষমতা তাদের হাতে নেওয়ার জন্য’ সমালোচনা করেছেন এবং তাদের এই সিদ্ধান্তকে অগণতান্ত্রিক বলে অভিহিত করেছেন।
তবে বিরোধী নেতা ইয়ার ল্যাপিড রায়কে স্বাগত জানিয়ে সোশ্যঅল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক বার্তায় বলেছেন, দেশের শীর্ষ আদালত ‘ইসরায়েলের নাগরিকদের সুরক্ষায় বিশ্বস্ততার সাথে তার ভূমিকা পালন করেছে’।
এছাড়া আইনের বিরুদ্ধে গত বছরের বড় আকারের বিক্ষোভগুলোর সাথে সম্পৃক্ত একজন সংগঠকও আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন। শিকমা ব্রেসলার এক ভিডিও বিবৃতিতে বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট আপাতত ‘আমাদের ঘাড় থেকে স্বৈরাচারের তলোয়ার’ সরিয়ে দিয়েছে।
বিবিসি বলছে, ‘যৌক্তিকতা’ নামের ওই আইনটি নেতানিয়াহু সরকারের প্রবর্তিত বিচারিক সংস্কারের একটি বিস্তৃত সিরিজের অংশ ছিল। এগুলো এসব আইন পর্যালোচনা বা বাতিল করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেবে, নেসেটে (সংসদ) সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেই এই জাতীয় সিদ্ধান্তগুলো বাতিল করারও সুযোগ থাকত।
নেতানিয়াহুর সরকার মূলত বিচারক নিয়োগের ওপর বৃহত্তর ক্ষমতা অর্জনের চেষ্টা করেছে এবং মন্ত্রীদের তাদের আইনী উপদেষ্টাদের পরামর্শ মেনে চলার প্রয়োজনীয়তা বাতিল করার চেষ্টা করেছে। নেতানিয়াহু যুক্তি দিয়েছেন, বিচারক এবং রাজনীতিবিদদের মধ্যে ভারসাম্যের প্রতিকারের জন্য এসব পরিবর্তন প্রয়োজন।
অবশ্য সুপ্রিম কোর্টের এই রায় নেতানিয়াহুর সরকারের প্রতি ইসরায়েলিদের আস্থা আরও ক্ষুণ্ন করার হুমকি সামনে এনেছে। নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি বলেছে, এই সিদ্ধান্ত ‘জনগণের ঐক্যের ইচ্ছার বিরোধিতা করেছে, বিশেষ করে যুদ্ধের সময়’।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের আক্রমণ ঠেকাতে এবং আটক করে গাজায় নেওয়া সকল ইসরায়েলি বন্দিকে উদ্ধার করতে ব্যর্থ প্রমাণিত হওয়ায় ইসরায়েলের নেতৃত্ব অভ্যন্তরীণভাবে ব্যাপক চাপের মধ্যে রয়েছে।