গাজায় যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা সঙ্কুচিত হচ্ছে: কাতার


নগর খবর ডেস্ক : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলের বোমাবর্ষণের ফলে সেখানে নতুন কোনও যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা ‘সংকীর্ণ’ হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছে কাতার। রাজধানীতে আয়োজিত দোহা ফোরামে বক্তৃতায় কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল-থানি একথা বলেন।
তিনি বলেছেন, এরপরও যুদ্ধবিরতির জন্য উভয় পক্ষকে চাপ দেওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে কাতার। সোমবার (১১ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত অক্টোবরের শুরুতে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। আর নভেম্বরের শেষে উপসাগরীয় এই রাষ্ট্রটি সেই সহিংসতায় সপ্তাহব্যাপী বিরতির আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেসময় বন্দি বিনিময়ও করে হামাস ও ইসরায়েল।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু রোববার বলেছেন, গাজায় ‘যুদ্ধ পুরোদমে চলছে’। তিনি দাবি করেন, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ‘হামাসের কয়েক ডজন সন্ত্রাসী’ আত্মসমর্পণ করেছে এবং ‘তারা তাদের অস্ত্র ফেলে দিয়েছে এবং নিজেদেরকে আমাদের বীর যোদ্ধাদের হাতে সমর্পণ করেছে’।
তার দাবি, ‘এটি হামাসের জন্য শেষের শুরু’।
এদিকে গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বর্বর হামলায় গত ২৪ ঘন্টায় আরও প্রায় ৩০০ জন নিহত হয়েছেন। এতে করে উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ১৮ হাজার।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদরা টেলিফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আল জাজিরাকে বলেছেন, গাজায় গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় ২৯৭ জন নিহত এবং আরও ৫৫০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। এছাড়া গত ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ভূখণ্ডটিতে মৃতের সংখ্যা ১৮ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। নিহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
এছাড়া আল জাজিরার কাছে দেওয়া এক অডিও বার্তায় হামাসের সশস্ত্র শাখা বলেছে, অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে তারা ইতোমধ্যেই নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণ করেছে এবং ইসরায়েল আলোচনায় জড়িত না হওয়া পর্যন্ত আর কোনও বন্দি মুক্তি পাবে না।
বার্তায় মুখপাত্র আবু উবাইদা আরও বলেছেন, হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর ১৮০টি সামরিক যান সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করেছে এবং বিপুল সংখ্যক ইসরায়েলি সৈন্যকে হত্যা করেছে। হামাস এখনও ইসরায়েলের ওপর হামলা করছে এবং ‘সামনের দিনগুলোতে তা হবে আরও ব্যাপক’।
দোহার এই সম্মেলনে, ফিলিস্তিনে নিযুক্ত জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেন, এই এলাকাটি (গাজা) ‘পৃথিবীতে নরকে পরিণত হয়েছে’ এবং ‘অবশ্যই এটি আমার দেখা সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি’।
এছাড়াও সম্মেলনে বক্তৃতাকালে, ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শতায়েহ বলেছেন, ইসরায়েলকে ‘আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন করতে দেওয়া উচিত নয়’। এসময় তিনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানান।
মূলত শতায়েহ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিত্ব করেন। এটি পশ্চিম তীরে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে এবং গাজায় পরিচালিত হামাস সরকারের থেকে আলাদা।
বিবিসি বলছে, বৈঠকটি দোহায় অনুষ্ঠিত হওয়ার সময়ও গাজার দক্ষিণে লড়াই অব্যাহত ছিল। খান ইউনিস শহরের লোকেদের যুদ্ধ থেকে বাঁচতে উত্তরে যেতে বলা হয়েছে। এই শহরটি এখন প্রচণ্ড ইসরায়েলি বোমাবর্ষণের মধ্যে রয়েছে। ইসরায়েল বেসামরিক নাগরিকদের এই শহরের কেন্দ্র ছেড়ে চলে যেতে বলেছে।
বিবিসি নিউজের সাথে কথা বলার সময় সিনিয়র ইসরায়েলি উপদেষ্টা মার্ক রেগেভ বলেছেন, খান ইউনিসে ‘কঠিন লড়াই’ হতে চলেছে এবং বেসামরিকদের ‘নিরাপদ অঞ্চলে সরে যাওয়ার’ আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিবিসি বলছে, রোববার সন্ধ্যায় ইসরায়েলি ট্যাংকগুলো এই শহরের কেন্দ্রস্থলে পৌঁছেছে। শহরের বেসামরিক ব্যক্তিরা নিহতদের মৃতদেহ সংগ্রহ করছেন এবং যুদ্ধে নিহতদের জন্য তাদের পরিবারের সদস্যদের শোক করতে দেখা গেছে।