গাড়ি চালকের ভুলে ঢাকার ‘সৌন্দর্য্য’ দেখলেন শর্মিলা ঠাকুর
নগর খবর ডেস্ক :২২তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিতে ঢাকা এসেছেন বলিউডের কিংবদন্তি অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর। ‘নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ’ স্লোগানে আজ শনিবার বিকেলে পর্দা উঠেছে এই উৎসবের।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান আকর্ষণ ছিলেন শর্মিলা ঠাকুর। এই উৎসবের এশিয়ান প্রতিযোগিতা বিভাগের বিচারক হিসেবে আছেন তিনি। অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ১৯ জানুয়ারি সন্ধ্যার একটি ফ্লাইটে ঢাকা পৌঁছান অভিনেত্রী। ৯ দিনব্যাপী এ উৎসবের শেষ দিন পর্যন্ত ঢাকায় থাকবেন বলিউড অভিনেতার সাইফ আলী খানের মা।
তবে ঢাকায় আসার আগে মিশ্র কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে এই তারকার। সেটাই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জানালেন তিনি। শর্মিলা বলেন, ‘আমি এই সুন্দর শহর ঢাকায় এসে খুবই খুশি। তবে এই সুন্দর শহরে আসা প্রায় বাতিল হতে বসেছিল! গতকাল যখন আমি দিল্লি বিমানবন্দরে গিয়েছিলাম, আমাকে বলা হলো কুয়াশার কারণে ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। বাইরে তখন প্রচণ্ড ঠাণ্ডা। পরবর্তী ফ্লাইট ছিল আজকে; যদি পরের এই ফ্লাইট ধরতাম, তাহলে আজকের এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারতাম না। পরে বাংলাদেশ বিমানের সহযোগিতায় ঢাকায় আসতে পেরেছি। একটা অ্যাডভেঞ্চার দিয়ে জার্নিটা শুরু হয়েছিল।’
এরপর শর্মিলা বলেছেন, ‘আমাকে উৎসবের পরিচালক বলেছেন, হোটেল থেকে ভেন্যু হেঁটে গেলে মাত্র দুই মিনিট, আর গাড়িতে পাঁচ মিনিট। কিন্তু কোনো কারণে আমরা একটা ভুল মোড় নিয়ে ফেলি। যার কারণে আমরা প্রায় ৩৫ মিনিট দেরিতে পৌঁছলাম। এটা একরকম অ্যাডভেঞ্চারই ছিল। ঢাকার কিছু রূপও দেখা হয়ে গেল।’
উদ্বোধনী আয়োজনের সাংস্কৃতিক পরিবেশনার প্রশংসা করে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘চলচ্চিত্র উৎসবের এই শুরুর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আমাকে মুগ্ধ করেছে। পুরনো চলচ্চিত্রের গানগুলো দিয়ে এই আয়োজন খুব ভালো লেগেছে। একটি সমাজের জন্য, একটি জাতির জন্য নিজের সংস্কৃতি তুলে ধরার চলচ্চিত্র ছাড়া আর কোনো ভালো মাধ্যম হতে পারে না। কারণ একমাত্র চলচ্চিত্রের কোনো ভাষা নেই। সেটা বাংলা, ইংরেজি, চায়নিজ, হিন্দি যা-ই হোক না কেন দর্শক চলচ্চিত্র খুব সহজেই বুঝতে পারে।’
উল্লেখ্য, ১৯৫৯ সালে সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’ দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় শর্মিলার। এরপর বহু কালজয়ী ছবিতে তাকে দেখা গেছে। সত্তরের দশকে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক নেয়া অভিনেত্রীদের একজন শর্মিলা ঠাকুর। তিনি দুইবার ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন; প্রথমবার মৌসম (১৯৭৫) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে এবং দ্বিতীয়বার আবার অরণ্যে (২০০৩) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে। এছাড়া তিনি আরাধনা (১৯৬৯) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন।
বিখ্যাত ভারতীয় ক্রিকেটার মনসুর আলী খান পতৌদিকে বিয়ে করেন। এই দম্পতির ছেলে সাইফ আলী খান হিন্দি চলচ্চিত্রের সফল অভিনেতা এবং তার মেয়ে সোহা আলী খান হিন্দি চলচ্চিত্রের একজন অভিনেত্রী। শর্মিলা ঠাকুর ২০০৪ সালের অক্টোবর থেকে ২০১১ সালের মার্চ পর্যন্ত ভারতীয় চলচ্চিত্রের সেন্সর বোর্ডের প্রধান ছিলেন। ২০০৯ সালের কান চলচ্চিত্র উৎসবের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার জুরি সদস্যদের একজন ছিলেন শর্মিলা। ২০১৩ সালে ভারত সরকার তাকে ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মভূষণে ভূষিত করে।