এক সময়ের গ্রামবাংলার অবিচ্ছেদ্য অংশ ‘ঢেঁকি’ এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। রাজশাহীসহ সারা দেশের গ্রামাঞ্চলে ধান ভাঙার জন্য ঢেঁকির ব্যবহার ছিল অত্যন্ত জনপ্রিয়। তবে আধুনিক প্রযুক্তির প্রসার, মিল-কারখানার উন্নয়ন এবং শ্রমঘন কাজের প্রতি অনীহা ঢেঁকির অস্তিত্বকে সংকটের মুখে ফেলেছে।
ঢেঁকির ইতিহাস ও ব্যবহার:ঢেঁকি একটি কাঠের তৈরি যন্ত্র, যা মূলত ধান ভাঙার কাজে ব্যবহৃত হতো। এটি সাধারণত শক্ত কাঠ দিয়ে তৈরি করা হতো এবং পায়রা বা কাঠের লিভার সিস্টেমের মাধ্যমে চাল তৈরি করা হতো। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে ঢেঁকির গুরুত্ব একসময় অপরিসীম ছিল। এটি শুধু ধান ভাঙার জন্যই নয়, বরং গ্রামীণ নারীদের কর্মসংস্থানেরও একটি বড় উৎস ছিল।
প্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় ঢেঁকির বিলুপ্তি:সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার ফলে ঢেঁকির ব্যবহার কমে গেছে। এখন চাল উৎপাদনের জন্য আধুনিক রাইস মিল, স্বয়ংক্রিয় ধান ভাঙার যন্ত্র এবং ইলেকট্রনিক গ্রাইন্ডারের ব্যবহার ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে ঢেঁকির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা কমে গেছে।
ঢেঁকি বিলুপ্তির প্রভাব:ঢেঁকির বিলুপ্তির ফলে গ্রামীণ জীবনের ঐতিহ্যগত একটি অংশ হারিয়ে যাচ্ছে। এটি শুধু একটি যন্ত্র নয়, বরং এটি গ্রামীণ সংস্কৃতির প্রতীক। ঢেঁকির সঙ্গে যুক্ত অনেক শ্রমজীবী নারী কাজ হারিয়ে ফেলেছেন, ফলে তাদের জীবিকায় প্রভাব পড়েছে।
সংস্কৃতি সংরক্ষণে করণীয়:ঢেঁকির ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে আমাদের বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী মেলা আয়োজন, জাদুঘরে ঢেঁকির সংরক্ষণ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা যেতে পারে। পাশাপাশি, ঢেঁকির ব্যবহারকে পর্যটনের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করলে এটি আবারও মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে আসতে পারে।
ঢেঁকি শুধু একটি যন্ত্র নয়, এটি আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ। প্রযুক্তির আধুনিকায়নে এটি হারিয়ে যেতে বসেছে, তবে সচেতন প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা এটিকে সংরক্ষণ করতে পারি। ঢেঁকির মতো ঐতিহ্যগত উপকরণ সংরক্ষণে মনোযোগ দেওয়া আমাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের বিকাশে সহায়ক হবে।