নগর খবর ডেস্ক : আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি রাজনৈতিক দল নয়, সন্ত্রাসী দল, আর জামায়াত যুদ্ধাপরাধীদের দল। বাংলাদেশের চলমান উন্নয়নকে সচল রাখার জন্যই বিএনপি-জামায়াত উভয়ের হাত থেকে দেশকে মুক্ত রাখতে হবে।
ছয় জেলায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণার অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। শনিবার বিকেলে তেজগাঁওয়ে অবস্থিত আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কুষ্টিয়ার পাবলিক লাইব্রেরি, ঝিনাইদহের উজির আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠ, সাতক্ষীরার সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, নেত্রকোণার জেলা স্টেডিয়াম, রাঙ্গামাটি জেলার শেখ রাসেল স্টেডিয়াম এবং বরগুনা জেলার বামনা ও পাথরঘাটা উপজেলায় ভার্চুয়ালি সমাবেশে যোগ দেন। পরে এসব স্থানের উপস্থিত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দল নয়, এটি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। জামায়াত যুদ্ধাপরাধীদের দল। এই সন্ত্রাসী এবং যুদ্ধাপরাধীদের থেকে দেশকে মুক্ত রাখতে হবে। তাহলেই দেশে উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত থাকবে। দেশের উন্নয়নের ধারাটা তখনই অব্যাহত থাকবে, যখন নির্বাচনটা সুষ্ঠু হবে। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তার মন মতো প্রার্থী বেছে নেবে এবং গণতান্ত্রিক ধারাটা অব্যাহত থাকবে। তাই আমার আবেদন থাকবে সকলের কাছে এই গণতান্ত্রিক ধারাটা অব্যাহত রাখতে হবে। উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রাখতে হবে এবং ধরে রাখতে হবে।
তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে আমরা যেন আরও উন্নত সমৃদ্ধ করতে পারি, সেই প্রচেষ্টাটা আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার ঘোষণা আমরা দিয়েছি। কাজেই আমাদের বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষকে আমরা আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় সুশিক্ষিত করে তুলব। জনগোষ্ঠী হবে স্মার্ট, আমাদের সরকার হবে স্মার্ট, অর্থনীতি হবে স্মার্ট এবং আমাদের সমাজ ব্যবস্থাও স্মার্ট হবে। আমরা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলব, মাথা উঁচু করে চলব। এটাই আমাদের লক্ষ্য।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে আর কাউকে আমরা ছিনিমিনি খেলতে দেব না, এই কথাটা মনে রাখতে হবে। ওই সন্ত্রাসী বিএনপি এবং যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের হাতে এদেশ কোনোদিনই নিরাপদ নয়। কারণ এরা এদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না। কাজেই এদের হাত থেকে জাতিকে রক্ষা করে দেশের দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখার আমি আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সরকারে আসার পর ২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত এই বাংলাদেশটা হচ্ছে, বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। মানুষের খাদ্যের কোনো অভাব নেই, আজকে চিকিৎসাসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পেরেছি। স্বাক্ষরতার হার বেড়ে, আজ ৭৬ দশমিক ৮ ভাগে উন্নীত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই এবং বৃত্তি ও উপবৃত্তি দিয়ে যাচ্ছি। রাস্তা-ঘাট-পুল ব্রিজ, অবকাঠামো তৈরি করে বাংলাদেশের যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটিয়েছি, তা আপনারা নিজেরাই দেখেছেন।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি চুক্তি করেছিলাম। এরপর পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন সাধন করি। একইদিনে সারাদেশে একসঙ্গে ‘শতসেতু’ উদ্বোধনের দিনে আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে ৪৫টি ব্রিজ উদ্বোধন করি। রাস্তা-ঘাট করে দিয়েছি এবং এখন সেখানকার এলাকা শান্তির এবং নানারকম উন্নয়ন হচ্ছে। সেই সঙ্গে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, নেত্রকোণা, এমনকি বরগুনা- যেটা সব থেকে অবহেলিত একটা জায়গা ছিল, সেখানে আজকে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। বরগুনা ও পটুয়াখালী সব মিলিয়ে পুরো বরিশাল বিভাগের চিত্র পাল্টে গেছে। এই উন্নয়নের ধারাটিকে আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে।
শখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসেনি। তারা নির্বাচন ঠেকানোর নামে ২০১৩ ও ১৪ সালে ঠিক যেমন অগ্নিসন্ত্রাস করেছিল, আবারও সেই ভয়ংকর রূপ নিয়ে তারা নেমেছে। তাদের নেতা কে সেটাই প্রশ্ন। দু’জনেই তো সাজাপ্রাপ্ত। এতিমের অর্থ আত্মসাৎ এবং বিভিন্ন দুর্নীতির কারণে আজকে খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তার শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে, তার বোন ও ভাই এবং পরিজনেরা আমাদের অনুরোধ করায়, তার সাজা স্থগিত করে বাসায় থাকার সুযোগ দিয়েছি।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়া, যারা আমাকে গ্রেনেড হামলা করে মারতে চেয়েছিল। বোমা পুঁতে রেখেছে, গুলি করেছে, ট্রেনে হামলা করেছে। তারপরেও তার (খালেদা জিয়া) জন্য আমরা এটুকু মানবিকতা দেখিয়েছি। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে তারেক জিয়া হাওয়া ভবন খুলে, সেটিকে একটি দুর্নীতির আখড়া বানিয়েছিল। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, ৫০০ জায়গায় বোমা হামলা- আমাদের বহু নেতা-কর্মীকে তারা হত্যা করেছে। এরপর ২০০৭ সালে ‘ইমার্জেন্সি’ এলে আর কোনোদিন ‘রাজনীতি’ ও ‘নির্বাচন’ করবে না বলে মুচলেকা দিয়ে, দেশে থেকে পালিয়েছে। আর, এখন বিদেশ থেকে হুকুম জারি করছে- পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারার।
২০১৩-১৪ এবং পরবর্তী সময়ে বিএনপি জামাতের সন্ত্রাসের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে সময় বিএনপি রাস্তাঘাট কেটেছে, গাছ কেটেছে ৫৮২ টি স্কুল, ৭০টি সরকারি অফিস, ছয়টি ভূমি অফিস এবং ৩২৫২টি গাড়ি, ২৯টি রেল, ৯টি লঞ্চ তারা আগুন দিয়ে পুড়িয়েছিল। সেগুলো মেরামত করে আমরা আবার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এখন আবার তাদের সেই ভয়ংকর রূপ! কাজেই এখন আমি সবাইকে বলব, যারা এই আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ায়- তাদের প্রতিহত করতে হবে।
তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন, মাত্র কয়েকদিন আগে রেলে আগুন দিল, ফিসপ্লেট খুলে ফেলল। রেলের বগি পুড়ে সেখানে একজন মানুষ মারা গেল। বাচ্চাকে বুকে আঁকড়ে ধরে থাকা মা ও শিশু আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে গেল। বাসে আগুন দিচ্ছে সেখানে ঘুমন্ত হেলপার আগুনে পুড়ে মারা গেল। কোনো মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ থাকলে, এগুলো তারা ঘটাতে পারে না। এ দেশের সাধারণ মানুষকে এই যে হত্যা করা, এর প্রতিশোধ তারা নেবেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামনে ইলেকশন। এই ইলেকশনটা আমরা এবার উন্মুক্ত করে দিয়েছি। কারণ আমরা চাই, জনগণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। শান্তিমতো ভোট দিক। সকলে জনগণের কাছে যাবেন। জনগণ যাকে ভোট দেবে, তিনিই নির্বাচিত হবেন। আমি চাই নির্বাচনটা শান্তিপূর্ণ হোক। জনগণের যে ভোটের অধিকার, সেটা তারা সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারুক। গণতন্ত্রটাকে আমরা সুরক্ষিত করতে চাই। কারণ একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকলে, বিধি ব্যবস্থা থাকলে, দেশের যে উন্নতি হয়- বর্তমান দৃশ্যমান উন্নতি সেটারই প্রমাণ।