চোখ ধাঁধানো লাল রঙে ঝলমল করছে চারপাশ। এক নজরে মনে হতে পারে আগুনের গোলা ঝুলছে গাছে। প্রকৃতির এই বিস্ময়কর শোভা আসলে এক অনন্য ফুল-ফায়ারবল লিলি বা মে ফ্লাওয়ার, যার বৈজ্ঞানিক নাম Scadoxus multifloras।
বাংলাদেশে সাধারণত বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে ফুটতে শুরু করে এই ফুল। তাই একে মে ফ্লাওয়ার নামেও ডাকা হয়। তবে স্থানভেদে মার্চ-এপ্রিলেও এর দেখা মেলে। আগুনের শিখার মতো লালবর্ণের এই ফুল মূলত গুচ্ছাকারে ফুটে ওঠে। একেকটি ফুলে প্রায় ২০০-২৫০টি ছোট ছোট পাপড়ি থাকে, যা একত্রে তৈরি করে একটি গোলাকার শোভাময় রূপ।
ফায়ারবল লিলি সাধারণত টবে বা মাটিতে রোপণযোগ্য। যত্ন সহকারে রোপণ করলে এটি প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট সময়ে নিজেই ফুল ফোটায়। বিশেষ করে যারা ফুলপ্রেমী, তাদের কাছে এটি খুবই জনপ্রিয় একটি ফুল। এর উচ্চতা সাধারণত ১ থেকে দেড় ফুটের মতো হয় এবং পাতাগুলো প্রশস্ত ও সবুজ রঙের, যা ফুলের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তোলে।
শুধু সৌন্দর্য নয়, ফায়ারবল লিলির রয়েছে কিছু ঔষধি গুণও। যদিও এটি বিষাক্ত প্রজাতির উদ্ভিদ হিসেবে বিবেচিত, সঠিক মাত্রায় ব্যবহার করলে এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, চর্মরোগ নিরাময় এবং ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করতে পারে বলে দাবি করেছেন কিছু আয়ুর্বেদ চিকিৎসক। তবে এর যেকোনো ব্যবহার অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শসাপেক্ষ হওয়া উচিত।
একসময় গ্রামবাংলার অনেক বাড়িতেই দেখা যেত ফায়ারবল লিলি। তবে বর্তমানে এটি ক্রমেই দুর্লভ হয়ে উঠছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বাগানের সংখ্যা হ্রাস এবং সচেতনতার অভাবে অনেকেই আর এই ফুল রোপণ করেন না। উদ্ভিদপ্রেমীদের মতে, এই ফুলকে টিকিয়ে রাখতে হলে স্কুল-কলেজে গার্ডেনিং শেখানো, নগর বাগান তৈরি এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রচার বাড়ানো জরুরি।
ফুলের শহর খ্যাত রাজশাহী, পাবনা ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে এবছর তুলনামূলক বেশি মে ফ্লাওয়ার ফুটেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় ফুলচাষিরা। 2
আগুন রঙের গোলা মতো দেখতে এই ফুল যেন প্রকৃতির নিপুণ আঁকা এক শিল্পকর্ম। এর অস্তিত্ব ও সৌন্দর্য রক্ষায় দরকার আমাদের সবার সম্মিলিত সচেতনতা। ফায়ারবল লিলি শুধু একটি ফুল নয়, এটি আমাদের ঋতু পরিবর্তনের জানান দেয়, প্রকৃতির প্রাণবন্ত রূপের এক নিখুঁত প্রতিচ্ছবি।