নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীতে জমি দখলের জন্য বাড়ি ও দোকানপাটে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের অভিযোগ করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন মো. আওয়াল (৫২) নামের এক ব্যক্তি।
শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে নগরীর একটি রেস্তোরাঁয় এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। আওয়ালের বাড়ি নগরের লক্ষ্মীপুর টিবি রোড এলাকায়। পেশায় তিনি মুদি দোকানী। গত ১৩ সেপ্টেম্বর এলাকার কিছু ব্যক্তি আওয়ালের বাড়িতে হামলা চালান। বাড়ির সঙ্গে থাকা আওয়ালের মুদি দোকান, তাঁর ছেলে লিমনের ফলের দোকান এবং ভাই বুলবুলের চায়ের দোকানও ভাঙচুর করা হয়েছে। দোকানের সব মালামাল লুট করে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়াল অভিযোগ করেন, বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ফিরোজ (৩০), আলামিন (৩৫), লিটনসহ (৪৫) ১০-১২ জন এই হামলা চালান। আওয়াল দাবি করেন, বদিউজ্জামান বদি নামের এক ব্যক্তি তাকে উচ্ছেদ করতে এসব করাচ্ছেন। তিনি আওয়ালের জমি দখল করতে চান। আওয়াল বলেন, বদি পর পর তিনবার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে ভোট করেন এবং প্রতিবারই পরাজিত হন। ভোটের সময় বদির পক্ষে কাজ না করার কারণে এখন তাদের ওপর এই নির্যাতন চালানো হচ্ছে। এখন ভাঙা বাড়িতে কোনরকমে তারা আছেন। ছাদ ভেঙে দেওয়ায় বৃষ্টি হলেই ঘরে পানি ঢুকছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আওয়ালের দাদা আমির শেখ এলাকায় ছয় কাঠা জমি কিনেছিলেন। এরমধ্যে ৩ কাঠা জমিতে ১৯৫৯ সাল থেকে তারা বসবাস করছেন। গত ১৩ সেপ্টেম্বর তাদের বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট হয়। এর পরদিন আবারও হামলা চালিয়ে বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। দোকান গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় ড্রেজার দিয়ে। এ নিয়ে আওয়াল নগরের রাজপাড়া থানায় মামলা করতে যান। তবে পুলিশ আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেয়। পরে তিনি আদালতে মামলা দায়ের করেন।
আওয়াল বলেন, মামলা করার কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে আসামিরা ১৫ সেপ্টেম্বর আবারও হামলা চালায়। সেদিন কাজল (৪৮), মলি (৩৫), বদি (৫১), টুটুল (৩৬), বাঁধন (২৮),রিংকু (৩৫), ফিরোজ (৩০), মিম (২৮), আলামিন (৩৫) ও আনন্দসহ (২০) ২৫-৩০ জন আবারও হামলা চালায়। এ দিন আওয়ালের ছোট ভাই বুলবুলের বাড়ির সঙ্গে থাকা চায়ের দোকান ভাঙচুর করা হয়। বাড়িতে লুটপাট চালায়। একপর্যায়ে ঘরে ঘরে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।
আওয়াল আরও বলেন, ‘এগুলো করেই সন্ত্রাসীরা ক্ষান্ত হয়নি। তারা পরবর্তীতে আমরা তিন ভাইসহ আমাদের পরিবারের প্রায় সকল সদস্যের বিরুদ্ধে রাজপাড়া থানায় একটি মিথ্যা মামলা করেছেন। বর্তমানে আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছি। আসামিরা আমাদের বাড়ির আশপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং আমাদের নানারকম হুমকি দিচ্ছে। এ অবস্থায় আমি আমার বৃদ্ধ মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছি।’
আওয়াল তার বিরুদ্ধে করা মামলার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন। পাশাপাশি যারা হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করেছেন তাদের শাস্তির দাবি জানান। এছাড়া নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তাও দাবি করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে আওয়ালের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বদিউজ্জামান বদি বলেন, ‘ওরা সরকারি জায়গা দখল করে আছে। স্থানীয়রা বলেছে, দোকানগুলো ভেঙে নিয়ে তারা যেন রাস্তাটা ক্লিয়ার করে রাখে। এতদূর জানি। কেউ হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট করেছে বলে শুনিনি। আর এগুলোর সঙ্গে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। তারা কেন আমার নাম জড়িয়েছে সেটাই এখন বুঝতে পারছি না।’
নগরীর রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি থানায় যোগ দিয়েছি ১৮ সেপ্টেম্বর। এর আগের ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছু বলতে পারব না। বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখা হবে। কেউ ভুক্তভোগী হলে তাকে অবশ্যই আইনগত সাপোর্ট দেওয়া হবে।’