রাজশাহীতে কর্মরত বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল "এখন টিভি"-র সাংবাদিক মাসুমা আক্তার আর নেই। কুমিল্লায় এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি গুরুতর আহত হন। চারদিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর মঙ্গলবার ভোর সোয়া ৪টায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
এখন টিভির রাজশাহী অফিসের সিনিয়র রিপোর্টার রাজিউল হাসান রাজিব জানান, গত শুক্রবার বিকেলে মাসুমা ছুটি নিয়ে স্বামীর সঙ্গে কুমিল্লায় শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছিলেন। কুমিল্লায় বাস থেকে নেমে সিএনজির ভাড়া নিয়ে কথা বলার সময় একটি সিএনজির ধাক্কায় তারা দুজনই রাস্তায় পড়ে যান। এতে মাসুমা মাথায় গুরুতর আঘাত পান। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয় এবং পরে প্রো-অ্যাকটিভ মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চারদিন লাইফ সাপোর্টে রাখার পর তিনি মারা যান।
মাসুমা আক্তারের মৃত্যুতে সাংবাদিক সমাজ, সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের মধ্যে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। রাজশাহীর প্রায় সকল সাংবাদিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।
মাসুমার সিনিয়র রিপোর্টার রাজিউল হাসান রাজিব তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘‘ফুলের স্টোরি শেষ করে এসে এক গাদা ফুল ধরিয়ে দিলো। বললো; ভাইয়া শুক্রবার ডে-অফ, শনিবার শব-ই-বরাতের ছুটি, আরো দু’দিন বাড়িয়ে ছুটি দেন। শাশুড়িকে দেখতে যাবো। প্রথমে ভাবলাম বলবো, না মাসুমা ছুটি নিওনা। অনেকগুলো কাজ বাকি। ভাইয়া আসতে চেয়েছেন। এই সব বলে থামাবো। পরে বললো একটা স্টোরি তুলে দিয়ে যাই। আপনি ভয়েস দিয়ে দিয়েন। বললাম থাক- তুমিই ভয়েস দিবা। ফিরে এসে করো। ছুটি পেয়ে অনেক হাসলো। বারণ করলাম, বললাম যাও সাবধানে ঘুরে আসো। একটা সুস্থ্য হাসি-খুশি মানুষ কি থেকে কি!!। জীবনের কিছু অভিজ্ঞতা মোটেও ভালো না, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা সেমিষ্টার আর কর্মজীবনের প্রায় দু’বছর তাকে খুব ডিসিপ্লিন এবং সচেতন হিসেবেই জানি।’’
এটিএন বাংলার স্টাফ রিপোর্টার সুজাউদ্দিন ছোটন তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘রাজশাহীতে নারী সাংবাদিকতায় সম্ভাবনাময় একজন বোনকে আমরা অকালে হারালাম। তার রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণের জন্য উদ্যোগ নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে সকল সাংবাদিক ইউনিয়ন এবং সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে। দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’’
রাজশাহী টেলিভিশন জার্নালিস্ট ইউনিটির (আরটিজেইউ) আহবায়ক বদরুল হাসান লিটন বলেন, ‘‘মাসুমা আক্তার সাংবাদিকতা পেশায় নিষ্ঠাবান ও প্রতিশ্রুতিশীল ছিলেন। তিনি ছিলেন পরিশ্রমী, সাহসী ও দায়িত্বশীল এক সংবাদকর্মী। তার চলে যাওয়া আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।’’
মাসুমা আক্তারের মৃত্যু সাংবাদিকতা জগতে একটি বড় শূন্যতা তৈরি করেছে। তার পরিবার, সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীরা এই দুঃসময়ে গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।