নগর খবর ডেস্ক : জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলায় ফেরিওয়ালা নরেশ রবিদাসের (৪৭) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। নিহত নরেশ মাদক সেবনের পর পরিবারের সদস্যদের অত্যাচার করতেন। এতে অতিষ্ট হয়ে স্ত্রী ও ছেলে মিলে তাকে হত্যার পর তার মরদেহ গাছে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করেন বলে জানায় পুলিশ।
এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী শান্তনা রবিদাস (৩৮) ও ছেলে সুজন রবিদাসকে (২২) গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মা-ছেলে নরেশ রবিদাসকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।
বুধবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আক্কেলপুর থানা পুলিশের উপ-পরির্দশক (এসআই) আমিনুল ইসলাম আমিন ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
এসআই বলেন, নরেশ চর্মকারের পাশাপাশি বিভিন্ন গ্রামে ফেরি করে শিশুদের খেলনা বিক্রি করতেন। এতে যা আয় হতো তার প্রায় সবটুকু তিনি মাদক সেবন (চোলাই মদ) করে খরচ করতেন। প্রতিদিন মাদক সেবন করে মাতাল অবস্থায় বাড়ি ফিরে স্ত্রী ও সন্তানকে মারধর করতেন। এতে পরিবারের সদস্যরা সবাই তার ওপর অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। হত্যাকাণ্ডের কিছুদিন আগে নরেশ মাদক সেবন করে বাড়িতে এসে পুত্রবধূর সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। এতে তার স্ত্রী ও ছেলে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
গত ১৭ ডিসেম্বর আওয়ালগাড়ি গ্রামে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান ছিল। ওই অনুষ্ঠানে নরেশ শিশুদের খেলনার দোকান দিয়েছিলেন। রাত ৮টার দিকে দোকান বন্ধ করে বাড়িতে চলে আসেন। বাড়িতে কিছু সময় থাকার পর বাইরে চলে যান। সেই রাতে স্ত্রী শান্তনা ও ছেলে সুজন নরেশকে খুঁজতে বের হন। তারা তুলশীগঙ্গা নদীর মাদারতলীঘাটে নরেশকে একজনের সঙ্গে মাদক সেবন করতে দেখেন। ওই ব্যক্তি চলে গেলে নরেশ অচেতন হয়ে পড়ে যায়।
আমিনুল ইসলাম আরও বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী ছেলে সুজন তার বাবার গলা চেপে ধরে আর মা শান্তনা মাফলার দিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলেন। একপর্যায়ে নরেশের মৃত্যু নিশ্চিত করে তারা বাড়িতে ফিরে যান। বাড়ি ফিরে গোয়াল ঘরে থাকা রশি কেটে এনে নরেশ রবিদাসের মরদেহ আমগাছে গাছে ঝুলিয়ে রাখেন। হত্যার পর যে রশি দিয়ে গলায় ফাঁস দেওয়া হয় সেই রশির বাঁকি অংশ নিহতের গোয়াল ঘর থেকে উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মা-ছেলে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।
আক্কেলপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, নরেশ রবিদাসের হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়েছে। স্ত্রী ও ছেলে মিলে তাকে হত্যা করেন। এ ঘটনায় নিহতের মা লক্ষ্মী রানী বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে থানায় মামলা করেছিলেন। ওই মামলায় শান্তনা ও সুজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ ডিসেম্বর সকালে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার তুলসীগঙ্গা নদীর মাদারতলী ঘাট এলাকায় একটি আমগাছ থেকে হাত-পা বাঁধা ঝুলন্ত অবস্থায় নরেশ রবিদাসের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি আক্কেলপুর উপজেলার আওয়ালগাড়ী গ্রামের মৃত বিরেন রবিদাসের ছেলে ও চর্মকার পেশার পাশাপাশি ফেরিওয়ালা ছিলেন। ফেরি করে ছোট বাচ্চাদের খেলনা বিক্রি করতেন।