নগর খবর ডেস্ক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুর-৫ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে নেমেছেন মো. আবুল কালাম আজাদ। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তার পরিকল্পনা, লক্ষ্য এবং প্রত্যাশা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন তিনি।
আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে নিজ এলাকায় নানা উন্নয়নমূলক কার্যক্রম হাতে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন এই নৌকার প্রার্থী। বিশেষ করে কৃষিনির্ভর জামালপুরে কৃষিতে অভাবনীয় সাফল্য এনে দিতে কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ এবং বন্যার পানি ধরে রাখতে একটি বাফার-জোন নির্মাণসহ বেশ কয়েকটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেছেন তিনি।
নৌকার প্রার্থী হিসেবে তাকে পেয়ে জামালপুরবাসীর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরেই জনগণ নৌকাকে সমর্থন করে আসছে। আর এবারের নির্বাচনে জামালপুর-৫ আসনের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য প্রধানমন্ত্রী যখন আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন, আমার এলাকার মানুষ এই সিদ্ধান্তে ভীষণ উচ্ছ্বসিত।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচারণায় বের হলেই দেখছি আশপাশের ঘর-বাড়ি থেকে ছেলে-বুড়ো সবাই রাস্তায় বেরিয়ে এসে আমাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছে। আগে আমি বা আমার দলের কর্মীরা সবাইকে দেখে হাত নেড়ে সম্বোধন করতাম, জয় বাংলা স্লোগান দিতাম। আর এখন সাধারণ জনগণ আমাদের দেখে হাত নেড়ে স্লোগান দেয়। জনগণের অভ্যর্থনা ও হাসিমুখ এটি প্রমাণ করে যে, জামালপুর জেলা নৌকার ঘাঁটি, শেখ হাসিনার ঘাঁটি ছিল, আছে এবং থাকবে। এটিই জনগণের ভালোবাসা, সমর্থন এবং নৌকার প্রতি আস্থার প্রমাণ। আমার বিশ্বাস, জামালপুর-৫ আসনের জনগণ আমাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করে শেখ হাসিনার হাতকে আরও শক্তিশালী করবে।’
নির্বাচিত হলে জামালপুরে কোন সমস্যা নিরসনে তিনি কাজ করবেন, যা এত বছরেও সমাধান হয়নি? এ প্রশ্নের জবাবে এই নৌকার প্রার্থী বলেন, ‘‘জামালপুর একটি সম্ভাবনাময় জেলা। এখানে বিকাশ ও উন্নয়নের অসংখ্য সুযোগ রয়েছে। তবে এসবের মধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা। বিশেষ করে জামালপুর সদরে এখনো অনেক কাঁচা রাস্তা রয়েছে যেখানে গাড়ি, বাস, ট্রাক তো দূরের কথা, রিকশা বা মোটরসাইকেল নিয়ে যাতায়াতও মুশকিল হয়ে পড়ে। এলাকায় যাদের সাথেই সাক্ষাৎ হয় সবার দাবি এলাকার রাস্তাগুলো সংস্করণ করা। তাই আমি একটা নতুন স্লোগান তৈরি করেছি, ‘রাস্তা চাই, ভোট চাই’।’’
‘আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি যে, এই একটি সমস্যা নিরসনের মাধ্যমে জেলায় অসংখ্য উন্নয়নের দ্বার উন্মুক্ত হবে। উদাহরণস্বরূপ; আমাদের এই ইউনিয়নেই একটি ইকোনমিক জোন হয়েছে, যেখানে বিপুল পরিমাণে কর্মসংস্থান তৈরির সুযোগ আছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলে এখানে বিভিন্ন বৈদেশিক বিনিয়োগ আসবে এবং সার্বিক উন্নয়ন বাস্তবায়নসহ জনজীবন সহজতর হবে।’
নির্বাচনে বিজয়ী হলে জামালপুরের উন্নয়নের বিষয়ে কী কী পরিকল্পনা রয়েছে জানতে চাইলে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘জামালপুরের কৃষকদের উৎপাদিত ফসল ও পণ্য মজুদকরণ সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে একটি কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ; বন্যার পানি ধরে রাখতে একটি বাফার-জোন নির্মাণ; কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ন্ত্রিত স্মার্ট এগ্রিকালচাল বাস্তবায়ন, যেখানে হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাঁটা, বীজ-বপন, ড্রোনের মাধ্যমে কীটনাশক প্রয়োগ ইত্যাদি সম্ভব হবে; জামালপুরের ঘরে ঘরে কর্মসংস্থান নিশ্চিত; জামালপুরে ঝিনাই নদীর পাড়ে শেখ হাসিনা নকশিপল্লী গঠন, যেখানে নকশি কাঁথার কারিগরদের আবাসস্থল হবে ও তাদের পণ্যগুলো তৈরি হবে।’
‘এছাড়া লক্ষ্মীরচর ও তুলশীরচরসহ সদরের সকল এলাকার রাস্তার উন্নয়ন করা জনগণের প্রাণের দাবি এবং সদরের সকল রাস্তার বর্তমান বেহাল অবস্থার সমাধান করা হবে। লক্ষ্মীরচর ও তুলশীরচর এই দুই ইউনিয়নে কোনো কলেজ নেই! শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে কলেজ নির্মাণ এবং যেই সকল ওয়ার্ডে প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই ওই সকালে ওয়ার্ডে প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ করা এবং সংস্কারযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধন; কর্মক্ষেত্র ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ডে-কেয়ার সেন্টার নির্মাণ; স্মার্ট ও সমৃদ্ধ জামালপুর বিনির্মাণের স্বপ্ন বাস্তবায়ন ইত্যাদি আমার লক্ষ্য।’
এই রাজনীতিবিদ বলেন, ‘ময়মনসিংহ বিভাগ দেশের একমাত্র বিভাগ যেখানে কোনো বিমানবন্দর নেই। আমার একটি স্বপ্ন জামালপুর জেলাকে অগ্রাধিকারে রেখে ময়মনসিংহ বিভাগে একটি বিমানবন্দর নির্মিত হবে। নির্বাচনে জয় লাভ করলে অতিসত্বর এই প্রকল্প নিয়ে আমার কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে। আমি আশা করি এই লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নে জামালপুর-৫ আসনের জনগণ আমার পাশে থাকবে এবং জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা আমার প্রতি তার আস্থা বজায় রাখবেন।’
উল্লেখ্য, মো. আবুল কালাম আজাদ জামালপুর সদরের দেওয়ান পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। জামালপুর জেলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক, সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও একজন দক্ষ সংগঠক। তিনি প্রধানমন্ত্রীর এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক ও মুখ্য সচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন।