রাজশাহীতে তিনদিন ব্যাপী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা
গাড়ি চালাতে গিয়ে যদি চালক ঘুমিয়ে পড়েন, তাঁকে সজাগ তুলবে এক রোবট। আবার একজন অন্ধ মানুষের পথপ্রদর্শক হয়ে কাজ করবে আরেকটি রোবট। রাজশাহী বিজ্ঞান ও শিল্পপ্রযুক্তি মেলায় একটি স্টলে এ দুটি রোবট দেখা গেল। এই দুটি রোবট তৈরি করেছে রাজশাহীর মাসকাটাদিঘী স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী মো. সামিউল খান ও মো. মাহফুজুর রহমান। তারা স্টলে দাঁড়িয়ে দর্শনার্থীদের তাদের রোবট প্রকল্পের খুঁটিনাটি বোঝাচ্ছিল। তাদের বানানো রোবট দুটি দেখতে স্টলে ভিড় করছেন অনেকেই।
প্রধান অতিথি ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে অভিনব প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রতিভা বিকশিত হবে এবং বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গঠনে অসামান্য ভূমিকা রাখবে। আজকের খুদে বিজ্ঞানীরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশ গঠনের মাধ্যমে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি করবে।
‘ভূমিকম্প অ্যালার্ম যন্ত্র’ নিয়ে এসেছে রাজশাহী মাদার বখশ্ অর্থনীতি কলেজের তিন শিক্ষার্থী রোদেলা ইসলাম, মোসা. বিনতি ও সুরাইয়া আক্তার। যন্ত্রটি বানাতে তাদের মাত্র ১০০ টাকা খরচ হয়েছে। তারা বলছে, ভূমিকম্প হলেই যন্ত্রটি অ্যালার্ম দেওয়া শুরু করবে। এতে করে মানুষ সতর্ক হয়ে নিরাপদ স্থানে যেতে পারবে। তারা যন্ত্রটির কার্যকারিতাও দর্শনার্থীদের দেখাচ্ছিল। যন্ত্রটি চেয়ারের ওপরে বসিয়ে চেয়ার নড়াতেই যন্ত্রটি বেজে উঠছে। এই শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, এটি তৈরি করতে একটি ব্যাটারির সঙ্গে তাদের কিছু বৈদ্যুতিক যন্ত্র কিনতে হয়েছে। কোনো ধরনের কম্পন হলেই যন্ত্রটি অ্যালার্ম দেওয়া শুরু করে। এতে করে ভূমিকম্প শুরু হলেই মানুষ সতর্ক হয়ে নিরাপদ স্থানে যেতে পারবে।
একটি স্টলে দেখা গেল কয়েকজন শিক্ষার্থীর ‘স্মার্ট সিটি’ প্রকল্প। তারা দেখাচ্ছিল একটি স্মার্ট শহরে বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, জলাধার, সবুজায়ন, আবাসিক এলাকা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের ব্যবস্থাপনা কেমন হবে।
প্যারামাউন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী নুসরাত জামান, সামিহা রহমান এবং সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী অপূর্ব পান্ডে মিলে ‘ইফিশিয়েন্ট রোড সিস্টেম’ প্রকল্প নিয়ে হাজির হয়েছে। তারা জানায়, শহরের ফুটপাত পথচারীদের হাঁটা বা রাস্তায় গাড়ি চলাচলের ফলে যে চাপ তৈরি হয়, সেখান থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হতে পারে। তাদের প্রকল্পে দেখানো হয়েছে শহরের মধ্যে কীভাবে পানি বেশি করে ভূগর্ভে প্রবেশ করতে পারে। এ জন্য তারা একটি বিশেষ ধরনের প্লট তৈরি করেছে।
নূরুল হুদা ভূঁইয়া বলেন, এ ধরনের মেলা বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গঠনের জন্য সহায়ক। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কোনো বিকল্প নেই।
সেলিম খান বলেন, এ মেলার প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো নতুন প্রজন্মের মধ্যে বিজ্ঞানসচেতনতা বাড়ানো। জনগণের চাহিদা অনুযায়ী নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করে গড়ে তোলা। শিক্ষার্থীরা যে নতুন নতুন চিন্তা ও উদ্ভাবন নিয়ে এসেছে, তা নিয়ে কাজ করবেন তাঁরা।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ড. মোঃ সেলিম খান বলেন, এ মেলার প্রকৃত উদ্দেশ্য হল নতুন প্রজন্মের মাঝে বিজ্ঞান সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি গবেষণার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন করা এবং জনগণের চাহিদা অনুযায়ী নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে তাদের আগ্রহ সৃষ্টি করা। এ মেলায় রাজশাহীর স্বনামধন্য স্কুল, কলেজ ও ক্লাবসহ ৪৪ টিরও বেশি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিভিন্ন উদ্ভাবনী স্টল দিয়ে ৪৯ টি বৈজ্ঞানিক প্রজেক্টের মাধ্যমে মেলাটিকে সুসজ্জিত করেছে। সকলের জন্য মেলা প্রতিদিন সকাল ১০:০০ টা হতে বিকাল ৫:০০ টা পর্যন্ত উম্মুক্ত থাকবে। শিক্ষার্থীদের তিনটি গ্রুপে (৬ষ্ঠ-৮ম শ্রেণিঃ ‘A’-গ্রুপ, ৯ম-১০ম শ্রেণিঃ ‘B’-গ্রুপ, ১১শ-১২শ শ্রেণি ও বিজ্ঞান ক্লাব ‘C’-গ্রুপ) বিভক্ত করে মেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা তাদের উদ্ভাবিত প্রকল্পসমূহ মেলায় প্রদর্শন করবে।
মেলার সমাপনী দিনে স্টল মূল্যায়নের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী ১ম, ২য় ও ৩য় স্টলকে বিশেষ পুরস্কার ছাড়াও প্রত্যেক স্টলকে সনদ প্রদান করা হবে।