বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায় করোনা, শক্তিশালী প্রমাণ পেলো ল্যানসেট


করোনা ভাইরাস প্রধানত বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়- এ বিষয়ে শক্তিশালী প্রমাণ পেয়েছেন ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বিজ্ঞানীদের একটি টিম। ব্রিটিশ চিকিৎসা বিষয়ক ম্যাগাজিন দ্য ল্যানসেটে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।
ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআই ওই রিপোর্টকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, করোনা ভাইরাস এসএআরএস-কোভ-২ প্রধানত বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়- এর সামঞ্জ্যপূর্ণ এবং দৃঢ় প্রমাণ পাওয়া গেছে। বাতাস থেকে এই ভাইরাস ছড়ায় বলেই চিকিৎসার জন্য জনস্বাস্থ্য বিষয়ক যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয় সেগুলো ব্যর্থ হয়।
কোঅপারেটিভ ইনস্টিটিউট ফর রিসার্স ইন এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস (সিআইআরইএস) এবং ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডো বৌলডারের একজন রসায়নবিদ হোসে লুইস জিমেনেজ বলেন, বাতাসের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পক্ষে ব্যাপক তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। বড় বড় ড্রপলেট বা হাঁচি-কাশির বড় বড় যেসব বিন্দু বেরিয়ে যায় তার মাধ্যমে এই সংক্রমণ ছড়ানোর পক্ষে প্রমাণ কম।
এই গবেষণা দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ডের তৃস গ্রিনহাফ। এই ভাইরাস যে প্রধানত বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায় তার পক্ষে যুক্তি হিসেবে ১০টি পয়েন্ট উত্থাপন করেছেন তিনি।
তাঁর মতে, শীর্ষে রয়েছে স্কাগিট চোইর প্রাদুর্ভাবের মতো সুপার স্প্রেডার। এতে একজনমাত্র আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে ৫৩ জন আক্রান্ত হতে পারে। ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, অভিন্ন কোনো তল স্পর্শ করা বা অন্য কোন কিছুর মাধ্যমে এই সংক্রমণ ব্যাখ্যা করা যায় না।
এছাড়া করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ইনডোর বা আবদ্ধ ঘরের মধ্যে অধিকহারে ছড়িয়ে পড়ার হার বেশি। ঘরের বাইরে বা আউটডোরে এই সংক্রমণের হার কম। ফলে ইনডোরে ভেন্টিলেশন বা বাতাস যাতায়াতের পথ খোলা রাখার মাধ্যমে এই সংক্রমণকে অনেকাংশে কমিয়ে রাখা যায়।
গবেষণায় দেখা গেছে নীরব সংক্রমণে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। এমনভাবে আক্রান্ত হওয়ার শতকরা হার মোট সংক্রমণের মধ্যে শতকরা কমপক্ষে ৪০ ভাগ। বিশ্বজুড়ে এই নীরব সংক্রমণ করোনা ছড়িয়ে পড়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
পক্ষান্তরে বড় বড় ড্রপলেটের মাধ্যমে সহজে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে এমন খুব সামান্য প্রমাণই এই টিমটি পেয়েছে। এইসব ড্রপলেট দ্রুতই বাতাসে মেশে এবং তলকে সংক্রমিত করে।
এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ধারণা করছিলো করোনাভাইরাসের উপস্থিতি থাকা কোনো সমতলে স্পর্শ করার মাধ্যমেই কেবল কোভিড-১৯ সংক্রমণ হতে পারে। শুরুর দিকে ধারণা করা হতো যে হাঁচি বা কাশির ফলে ছড়ানো ড্রপলেটের মাধ্যমেই করোনাভাইরাস ছড়ানো সম্ভব। সে কারণেই মহামারির শুরুর দিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তারা কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষার জন্য হাত ধোয়াকে অন্যতম একটি পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন। কিন্তু গত বছরের আগস্টে তারা বলছেন, বিশেষ পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাসের ‘বায়ুবাহিত সংক্রমণের’ আশঙ্কা থাকতে পারে।
সূত্র: এনডিটিভি