রাজশাহী

বাঘার পাকুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম মেরাজকে আটক

বাঘার পাকুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম মেরাজকে আটক করেছে পুলিশ। গত ২১ মার্চ উপজেলা আ’লীগের সম্মেলনে হামলার অভিযোগে রবিবার (২৪ মার্চ) সকালে রাজশাহী জেলার শিরোইল এলাকা থেকে পুলিশ তাকে আটক করে।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া মাত্র এক বিঘা জমি থেকে বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও সাবেক রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেরাজুল ইসলাম মেরাজ এখন কোটি-কোটি টাকার মালিক। তার বাড়ি সীমান্ত এলাকার কিশোরপুর গ্রামে। পিতার নাম রাকিব সরকার। তিনি ছিলেন এক সময়ের ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি।

উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম মন্টু, অধ্যক্ষ নছিম উদ্দিন,আ’লীগ নেতা মাসুদ রানা তিলু ও বাঘা পৌরসভার কাউন্সিলর ও দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহিনুর রহমান পিন্টু জানান, মেরাজ বর্তমান সরকার আমলের প্রথম ১০ বছর একক ভাবে বালু ব্যাবসা করে প্রচুর টাকার মালিক বনেছেন। এই বালু উঠাতে গিয়ে যে স্থানে তার ইজারা নেয়া আছে, সেই স্থানে বালু না তুলে অন্যস্থানে অবৈধ ভাবে উত্তোলন করায় উপজেলা ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট শাহিন রেজা দুই দফা তার ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন। এর আগে নদী থেকে অন্যের জমির উপর দিয়ে জোর পূর্বক পাইপ বসিয়ে বালি উত্তোলন করতে গেলে জনগণের তোপের মুখে পড়েন তিনি। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরেজমিন গিয়ে সেই বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেন। বর্তমানে তিনি পাটনারশীপে এই ব্যবসা চালু রেখেছেন।

তারা আরো জানান, মেরাজুল ইসলাম বালু উত্তোলনের জন্য প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা দিয়ে একটি প্লেটার ম্যাশিন এবং ৩৫ লক্ষ টাকা দিয়ে প্রিমিও গাড়ি ক্রয় করে সেই গাড়িতে ঘুরে বেড়ান। এ ছাড়াও নিজ এলাকায় ২৫ বিঘা জমি ক্রয় সহ রাজশাহী শহরে একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। অভিযোগ রয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনার ক্ষেত্রেও তার বেশ কিছু অনিয়ম-দুর্নীতি রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাঘা সাবরেজিষ্ট্রি অফিসের একজন কর্মকর্তা জানান, সম্প্রতি মেরাজ চেয়ারম্যানের নামে দুদকে কে-বা কারা অভিযোগ করায়, তার নামীয় সম্পদ অনুসন্ধানে দুদক আমাদের কাছে তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছেন। আমরা খুব শীঘ্রই এ তথ্য প্রেরণ করবো।

বাঘা থানা পুলিশের মুখপাত্র জানান, ২০১৭ সালে ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ থানায় মেরাজুল ইসলাম ও তার খালু নওশাদ আলীর বিরুদ্ধে আদম ব্যবসার নামে প্রায় অর্ধকোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগে একটি মামলা করেন জনৈক ব্যাক্তি। যার নম্বর ৪১৭/১৬ । এ মামলায় তার খালু গ্রেফতার হয়। পরে এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে, জেলা ছাত্রলীগের পদ ও রাজনৈতিক ক্যারিয়ার রক্ষার্থে তিনি ও তার খালু সেই মামলা আপোশ করে নেন। উল্লেখ্য, গত সোমবার (২১ মার্চ) বেলা ১১ টায় বাঘার শাহদৌলা সরকারি কলেজ মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন চলা অবস্থায় জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বাঘা পৌরসভার সাবেক মেয়র আক্কাস আলী সভাপতি হতে না পারার অবস্থান বুঝতে পেরে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে সভা মঞ্চ এবং দর্শক গ্যালারী লক্ষ করে লাটি-সোটা নিয়ে চেয়ার ভাংচুর ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় যারা সম্পৃক্ত ছিলো তাদের মধ্যে আক্কাস আলীর আপন ভাগ্নে ও পাকুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলামের ভূমিকা ছিলো ব্যাপক উগ্রবাদী।

পরে পুলিশ সহ সভাস্থলে উপস্থিত একই দলীয় কর্মী-সমর্থকরা আক্কাস বাহিনীকে ধাওয়া করলে তারা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় প্রায় ৩০ জন আহত হন। এ বিষয়ে থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেই মামলার দুই নম্বর আসামী ও আক্কাস আলীর সেকেন্ড ইন কমান্ড মেরাজুল ইসলামকে বৃহস্পতিবার সকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আটক করেছে পুলিশ।

বাঘা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি)সাজ্জাদ হোসেন জানান, মেয়র আক্কাছ আলীর বিরুদ্ধে ১৯৯৬ সালে আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কালো পতাকা দেখানোর অপরাধে তাকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়ে ছিলো। পরবর্তী সময় ২০০০ সালে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করলে তাকে ফের দলে নেয়া হয়। তার বিরুদ্ধে বিগত সময়ে বহুল আলোচিত বিবস্ত্র মামলা সহ একাধিক নারী নির্যাতন, সরকারী কাজে বাধা প্রদান, আদালতের নাজিরকে মারপিট, ধর্ষন, বলাৎকার, জমি দখল, দুর্নীতি, হোটেল ভাংচুর সহ ২১ টি মামলা ও ২৬ টি জিডি রয়েছে।

সর্বশেষ ২১ মার্চ উপজেলা আ’লীগের সম্মেলন স্থলে তিনি কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে তার বাহিনী নিয়ে যে তান্ডব চালিয়েছে তাতে সকল নেতা ও স্থানীয় লোকজন তার প্রতি ক্ষুব্ধ। এ ঘটনায় থানায় পৃথক দু’টি মামলা দায়েরের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে । তবে তার ভাগ্নে মেরাজুল ইসলামকে বৃহস্পতিবার সকালে রাজশাহীর শিরোইল এলাকার একটি বাড়ি থেকে আটক করা সম্ভব হয়েছে।

আরো দেখুন

সম্পরকিত খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button