ধর্ষণ মামলায় অধ্যক্ষ মারুফের বিরুদ্ধে চার্জশিট


রাজশাহীর হড়গ্রাম মডেল টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ ড. মারুফ হোসেনের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ মামলার অভিযোগ পত্র জমা দিয়েছে পুলিশ। দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত ৩০ এপ্রিল ঐ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্র ( চার্জশিট) জমা দিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই মো: শরিফুল ইসলাম। তদন্তে জব্দকৃত বিভিন্ন আলামত এবং সাক্ষীদের জবানবন্দীর প্রেক্ষিতে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ( সংশোধনী ২০০৩) এর ৯(১) ধারার অপরাধ সত্য বলে প্রাথমিক প্রতিয়মান হওয়ায় অধ্যক্ষ মারুফ হোসেনকে অভিযুক্ত করে এই অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। অভিযুক্ত মারুফ পবা উপজেলার ফুদকিপাড়া খিরশিন এলাকার আমজাদ হোসেনের ছেলে।
২০২৩ সালের ২১ এপ্রিল কলেজের অধ্যক্ষ ড. মারুফ হোসেনের বিরুদ্ধে রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় ধর্ষণ মামলা করেন একই কলেজের এক নারী প্রভাষক।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, আসামী মারুফ মামলার বাদির আপন মামাতো ভাই এবং রাজশাহী হড়গ্রাম মডেল টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ। নিকট আত্মীয় ও চাকরির সুবাদে বাড়িতে এবং কর্মস্থলে তার সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে।
এই সম্পর্কের সুযোগ নিয়ে ২০১৬ সালের ২০ আগস্ট ভুক্তভোগীর বাড়িতে কেউ না থাকায় তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে এবং বিষয়টি কাউকে জানালে চাকরির সমস্যা হবে বলে হুমকি প্রদান করে। ঘটনাটিকে পুঁজি করে এবং বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর ঐ নারীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক চালিয়ে যায় অধ্যক্ষ ড. মারুফ। এক পর্যায়ে মামলার বাদী ঐ নারী প্রভাষক ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক বিয়ের কথা বললে অধ্যক্ষ মারুফ অস্বীকৃতি জানায় এবং নানারকম ভয় ভীতি দেখিয়ে মানসিক চাপ সৃষ্টি করেন। শুধু তাই নয় কর্মস্থলে মিথ্যে অভিযোগ এনে নানারকম কৈফিয়ত তলব করে অধ্যক্ষ মারুফ।এছাড়াও কলেজর সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা বন্ধ করে দিয়ে নানা রকম হয়রানি করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগী প্রভাষক কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান, রাজশাহী জেলা প্রশাসক, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, ডিজি শিক্ষা, আঞ্চলিক শিক্ষা কর্মকর্তা, প্রতিষ্ঠানের সভাপতি, কারিগরি শিক্ষক সমিতিসহ বিভিন্ন দপ্তরে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু অধ্যক্ষ ড. মারুফ হোসেন তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এমপি, কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের সান্নিধ্যে থাকায় সেই অভিযোগগুলো আলোর মুখ দেখেনি। এছাড়াও কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ছিলেন মারুফের বাবা আমজাদ হোসেন। আত্মীয় স্বজনরা ছিলেন সদস্য । এতে আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে ওঠে তিনি। শুধু তাই নয় গত ১৫/১৬ বছরে দলীয় প্রভাবশালী নেতাদের পরিচয় ও প্রভাব খাটিয়ে বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন এই মারুফ হোসেন। তিনি নিজেও পতিত আওয়ামী লীগ অনুগত কারিগরি শিক্ষক সমিতির রাজশাহী মহানগরের সাধারণ সম্পাদক।
মামলা দায়েরের পর গ্রেফতার এড়াতে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ মারুফ আত্মগোপনে চলে যায়। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ০৮ মে উচ্চ আদালত থেকে ছয় সপ্তাহের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পান। জামিনের মেয়াদ শেষে রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ হাজির হয়ে পবিত্র হজে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে জামিনের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। এরপর ২০২৩ সালের ০৮ আগষ্ট মামলাটি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আসলে সেখানে বদলি জামিন নেন অধ্যক্ষ মারুফ হোসেন। এরপর চলতে থাকে নিয়মিত হাজিরা। আগামী ৩০ জুলাই মামলার দিন ধার্য রয়েছে।
এ বিষয়ে মামলার বাদী ঐ নারী প্রভাষক বলেন, অভিযোগ পত্রের অনুলিপি আমি হাতে পেয়েছি। এতে অনেক সত্য বেরিয়ে এসেছে। তবে, এই মামলার আসামি অনেক প্রভাবশালী ও অর্থ সম্পদের মালিক হওয়ায় নিজেকে বাঁচাতে নানা রকম দেনদরবার করছেন। কেননা এর আগেও তিনি ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আমার অনেক আলামত নষ্ট করেছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, কলেজের সকল শিক্ষক কর্মচারীদের থেকে আলাদা করে দীর্ঘ দেড় বছর একা অন্য একটি কক্ষে সিসি ক্যামেরার সামনে আমাকে রাখা হয়। সেখান থেকেই আমি আমার দায়িত্ব পালন করি। তবে ৫ আগস্টের পর অবস্থা বেগতিক দেখে আমাকে শিক্ষক রুমে ফিরিয়ে আনা হয়। ভুক্তভোগী ঐ প্রভাষক আরো বলেন ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে আমি শঙ্কিত । তবে আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আদালতের বিচারক নিশ্চয়ই ন্যায় বিচার করবেন। আমি এই লম্পট প্রতারকের কঠোর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মারুফ হোসেনকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।