f
রাজশাহী

মায়ের কবরে মাটি দিয়ে এসে কবরস্থানের দেয়ালে দাঁড়িয়ে কাঁদছে মেঘ

রাজশাহী ব্যুরো অফিসের টেলিভিশন সাংবাদিক নিহত মাসুমা ইসলামের একমাত্র সন্তান মেঘ আজ বাবা-মা দুজনকেই হারিয়ে নির্বাক। মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে মায়ের কবরে মাটি দিয়ে এসে কবরস্থানের দেয়ালের ওপরে বসে অশ্রুশিক্ত চোখে তাকিয়ে আছে মেঘ। ১২ বছরের ছোট্ট এই শিশুটির জীবনের আকাশ আজ মা-হারা কালবৈশাখীতে ঢেকে গেল।

মাসুমা ইসলামকে শেষ বিদায় জানাতে রাজশাহীতে কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার তার বাড়িতে গিয়েছিলেন। সেখানে সবাই অশ্রুশিক্ত চোখে মাসুমার কর্মময় জীবন ও স্মৃতিচারণ করেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাসুমার সন্তান মেঘের একটি ছবি পোস্ট করেছেন জাহিদ হাসান সাব্বির নামের এক সংবাদকর্মী। ছবির ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, ‘বাবা মারা গেছে বছর বারো আগে, আমি তখন শুধুই অবুঝ শিশু। আজ ভোরে মা-ও গেল ওপারে, আমার মতো আর অভাগা নেই এ পৃথিবীতে।’

জাহিদ হাসান সাব্বির জানান, ‘মেঘ মায়ের জানাজায় উপস্থিত ছিল। এই বয়সে এত বড় দুঃখ সে কীভাবে সামলাবে? জন্মের পরই তার বাবা মারা যান। বাবাকে দেখার সুযোগই হয়নি তার। এখন ১২ বছর বয়সে মা-ও চলে গেলেন। মেঘ এখন নানা বাড়িতে থাকবে। সে রাজশাহী সৃষ্টি সেন্ট্রাল স্কুলের সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। এই স্কুলে তাকে ভর্তি করিয়েছিলেন তার মা মাসুমা।’

তিনি আরও বলেন, ‘মাসুমার বাড়ি থেকে মাত্র ১০০ গজ দূরে তাকে দাফন করা হয়েছে। মাসুমার সঙ্গে মেঘের চেহারার অনেক মিল রয়েছে। এক নজরেই বোঝা যায় সে মাসুমার সন্তান। মাসুমার মা-বাবা প্রচণ্ড কান্নাকাটি করছিলেন। এমন মর্মান্তিক ঘটনায় তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমাদের নেই। মেঘের জীবন এখন মেঘময় হয়ে গেল।’

মাসুমার মা রেহেনা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার মেয়ে চাকরি পেয়ে অনেক খুশি হয়েছিল। সে বলত, “অনেক বড় চ্যানেলে চাকরি পেয়েছি আম্মু, তুমি চিন্তা করো না। সংসারে আর অভাব হবে না। মেঘকেও মানুষ করতে পারব।” কিন্তু সন্তান রেখেই চলে গেল আমার মেয়ে। এখন মাসুমার সন্তানের কী হবে? কী নিয়ে বাঁচব আমরা?’

তিনি আরও বলেন, ‘শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার সময় মাসুমা গয়না পরেছিল। দুর্ঘটনার পর তার গয়না হারিয়ে গেছে। যদি আমার মেয়ে বেঁচে থাকত, আমি তাকে আবার গয়না গড়িয়ে দিতাম।’

উল্লেখ্য, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি মাসুমা ইসলাম কুমিল্লায় শ্বশুরবাড়িতে স্বামীসহ বেড়াতে যাচ্ছিলেন। এ সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নূরজাহান হোটেলের উল্টোদিকে বাস থেকে নেমে সিএনজি ঠিক করার সময় দ্রুতগামী একটি বাস তাদের ধাক্কা দেয়। এতে সিএনজি অটোরিকশার চালক, মাসুমা ও তার স্বামী গুরুতর আহত হন। প্রথমে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসায় উন্নতি না হলে তাকে নারায়ণগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে মাসুমা ইসলাম মৃত্যুবরণ করেন।

মাসুমার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে তার পরিবার, সহকর্মী ও আত্মীয়স্বজনের মধ্যে। তার একমাত্র সন্তান মেঘের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন শঙ্কিত সবাই।

Back to top button