সারাদেশ

অগ্রহায়ণেই হাড়কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন, প্লেন ওঠা-নামা বিঘ্ন

নগর খবর ডেস্ক : উত্তরের জেলা নীলফামারীতে প্রতিদিনই নামছে তাপমাত্রা। প্রকৃতিতে হেমন্তকাল চললেও এরই মধ্যে এই জনপদে এবার বাড়তে শুরু করেছে শীত। দুই দিন ধরে ঘন কুয়াশায় রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত আচ্ছন্ন থাকছে। ঘন কুয়াশার কারণে এ অঞ্চলের আকাশ ও সড়ক পথে যান চলাচল বিঘ্ন ঘটছে।

সোমবার (১১ ডিসেম্বর) সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে কোনো ফ্লাইট ওঠা-নামা করেনি। এতে বেসরকারি দুই কোম্পানির দুটি ফ্লাইটের প্রায় ৮০ জন যাত্রী বিমানবন্দরে আটকা পড়েছেন। তবে কোনো ফ্লাইট বাতিলের সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

 

সৈয়দপুর বিমানবন্দরের ম্যানেজার সুপ্লব কুমার ঘোষ বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে বিমানবন্দরে ফ্লাইট ওঠা-নামা ব্যাহত হয়েছে। দৃষ্টিসীমা বাড়লে ফ্লাইট চলাচল স্বাভাবিক হবে। কোনো ফ্লাইট বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

ঘন কুয়াশায় দৃষ্টিসীমা কম থাকায় গতকাল রোববার রাত নয়টায় নভোএয়ারের একটি ফ্লাইট ঢাকা থেকে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অবতরণ করতে না পেরে ফের ঢাকায় ফিরে গেছে।

বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা লোকমান হোসেন গণমাধ্যমে


বলেন, সাধারণত ২ হাজার মিটার দৃষ্টিসীমা থাকলে রানওয়েতে বিমান ওঠা-নামা করতে পারে। সকাল ৯টায় বিমানবন্দর এলাকায় দৃষ্টিসীমা ছিল ১০০ মিটার। ফলে ঢাকা থেকে কোনো ফ্লাইট এখানে অবতরণ করতে পারেনি।

এদিন সকাল ৬টায় সৈয়দপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গত কয়েক দিনের চেয়ে কম। দুই-এক দিনে এই তাপমাত্রা আরও কমবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

 

এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীর গতিতে চলাচল করছে বিভিন্ন যানবাহন। এতে দূরপাল্লার যানবাহনগুলো নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না। এমন আবহাওয়ার কারণে অফিসগামী ও শ্রমজীবী মানুষেরা কিছুটা বিপাকে পড়েছে। এছাড়া ঠান্ডা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতজনিত রোগে আক্রান্তের হার বেড়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা বেশি পরিমাণে আক্রান্ত হচ্ছেন। হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপও বেড়েছে।

অপরদিকে তাপমাত্রা কমায় ব্যস্ততা বেড়েছে জেলার লেপ-তোশকের দোকানে। স্থানীয় বাজারগুলোতে দেখা যাচ্ছে শীতের আমেজ। পিঠাপুলি সঙ্গে ফুটপাতে বসেছে মৌসুমি শীতের কাপড়ের দোকান। এরমধ্যে পুরনো কাপড়ের দোকানের সংখ্যাই বেশি। এসব দোকানে বিক্রি হচ্ছে ব্লেজার, কোর্ট, কম্বলসহ বিভিন্ন ধরনের মোটা কাপড়। শীত নিবারণের জন্য মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ করলেও নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া ও শ্রমজীবী মানুষগুলো শীতবস্ত্র সংগ্রহ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে।

 

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাতভর পড়া কুয়াশায় ভিজে গেছে পিচঢালা পথগুলো। গাছের পাতা, ফসলের খেত আর ঘাসের ওপর থেকে টপটপ করে পড়ছে শিশিরবিন্দু। ঘন কুয়াশার কারণে সকালে সড়কের যানবাহনগুলো চলছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। কুয়াশার মধ্যেই গায়ে শীতের কাপড় জড়িয়ে কর্মজীবী মানুষ ছুটছে কাজের সন্ধানে।

 

শহরের চৌরঙ্গী মোড় এলাকায় কথা হয় ইজিবাইক চালক সামসুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, গত দুইদিন ধরে বেশি ঠান্ডা চলেছে। দুইটা সোয়েটার দিয়াও ঠান্ডা পালায় না। লোকজনও তেমন বাহিরে বের হচ্ছে না। সকাল থেকে তেমন ভাড়া পাই নাই।

 

ইজিবাইক চালক জুয়েল রানা গণমাধ্যমে  বলেন, দুই দিন ধরে শীত একুট বেশি বেড়েছে। এতে করে রাস্তায় মানুষের চলাচল কমে গেছে। ঠিকমতো ভাড়া হচ্ছে না। বাজারে সবকিছুর দাম বেশি। এভাবে চলতে থাকলে তো না খেয়ে থাকতে হবে।

 

জেলা সদরে লক্ষ্মীচাপ এলাকার কৃষক আবেদ আলী গণমাধ্যমে  বলেন, ঠান্ডায় হাত-পা অবশ হয়ে আসছে। তবু সবজি তুলে বাজারে বিক্রি করতে হবে, না হলে সংসার চলবে কি করে।

 

নীলফামারীর সিভিল সার্জন ডা. মো. হাসিবুর রহমান জানান, জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শীতজনিত নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত বেশি শিশু ভর্তি হচ্ছেন।

 

নীলফামারীর জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ গণমাধ্যমে বলেন , শীত মোকাবিলায় পর্যাপ্ত সরকারি সহায়তা প্রস্তুত রয়েছে। শীতবস্ত্র হিসেবে জেলার ৬ উপজেলা ও চার পৌরসভায় ২৫ হাজার পিচ কম্বল পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখনও প্রায় ৫ হাজার মজুদ আছে। প্রয়োজনে আরও চাহিদা দেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button