বরিশালসারাদেশ

দক্ষিণাঞ্চলে আওয়ামীপন্থি স্বতন্ত্রে ঝড়ের মুখে নৌকা

নগর খবর ডেস্ক : বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার ৪২ উপজেলা নিয়ে সংসদীয় ২১টি আসন গঠিত। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এসব আসনে দলীয়  ৯৫ ও স্বতন্ত্র ২৫ মিলিয়ে মোট ১২০ জন প্রার্থী লড়ছেন। এর মধ্যে ১৭টি আসনে নৌকার প্রার্থী। বাকি চারটি আসনে নৌকা মনোনীত কেউ না থাকলেও আওয়ামী লীগ নেতারা স্বতন্ত্র হিসেবে রয়েছেন।

মাঠপর্যায়ের হিসাব অনুযায়ী, ৮টি আসনে জয় সুনিশ্চিত ও ৯টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়বে ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত নৌকা। বাকি চারটির দুটিতে আওয়ামীপন্থি স্বতন্ত্র প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। যেসব আসনে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে রয়েছে নৌকা সেই আসনগুলোতে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামীপন্থি স্বতন্ত্র। এমনকি আওয়ামী লীগের শরিকরাও পড়েছেন স্বতন্ত্রের দুশ্চিন্তায়। বেশ কয়েকটি আসনে নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। ফলে নৌকার সাথে আওয়ামীপন্থি স্বতন্ত্রের লড়াইয়ে সীমাবদ্ধ এই নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী অন্য ছোট দলগুলোর প্রার্থীরা জামানত রক্ষার মতো ভোটও ঝুলিতে ফেলতে পারবেন না বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নির্বাচন বিশ্লেষক বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান সোহেল রানা মনে করেন, হেভিওয়েট প্রার্থীদের সঙ্গে তুলনামূলক অপরিচিত, নতুন প্রার্থীদের প্রতিযোগিতা গড়ে তোলা কষ্টকর। ফলে যারা নির্বাচনে লড়াই করতে চান তাদের উচিত বেশ আগে থেকেই জনসংযোগ করা। জনগণের প্রয়োজন অনুযায়ী নিজের উন্নয়ন পরিকল্পনা সাজানো। পুরো রাজনীতির মাঠে আজকে যাদের আমরা জনপ্রিয় হিসেবে দেখছি, তারা কিন্তু দীর্ঘ এক রাজনৈতিক পথপরিক্রমার মধ্য দিয়ে গেছেন। জনগণের সঙ্গে তাদের সম্পর্কও নিবিড়। গণতন্ত্রে জনগণের মনের ভাষা বুঝতে পারাটা গুরুত্বপূর্ণ। ভোটের মাঠে যারা নতুন তাদের এসব বিষয়কে আরও গুরুত্ব সহকারে উপলব্ধি করতে হবে।
যেসব আসনে নির্ভাবনায় নৌকা

বিভাগের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আসন রয়েছে যেখানে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন। ওইসব আসনে বড় কোনো রাজনৈতিক দলের এমনকি সুপরিচিত কোনো প্রার্থীও নেই। যে কারণে অনেকটা নির্ভাবনায় জয়ী হবেন এসব আসনের নৌকার মাঝিরা।
এর মধ্যে রয়েছে ভোলা-১ (সদর) আসনের নৌকার প্রার্থী তোফায়েল আহমেদ। তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে শাহজাহান মিয়া ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের মশাল প্রতীক নিয়ে সিদ্দিকুর রহমান।

সিদ্দিকুর রহমান বলেন, তোফায়েল আহমেদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সক্ষমতা আমার বা আমার দলের নেই। দলটি কী অবস্থায় রয়েছে আপনারা (সাংবাদিক) ভালো জানেন। তারপরও নির্বাচন করছি।

লাঙ্গল প্রতীকের শাহজাহান মিয়া বলেন, তোফায়েল আহমেদ জাতীয় নেতা। রিটার্নিং কর্মকর্তা আমাদের সমাবেশ করতে না করলেও তিনি করছেন। আমরা মেনে নিয়েছি। কোন প্রেক্ষাপটে কীভাবে এই নির্বাচন হচ্ছে তা সকলেই জানে। ভোলার উন্নয়ন জাতীয় পার্টির নাজিউর রহমান মঞ্জু করেছেন। সেই কথা মানুষ আজও মনে রেখেছে। নির্বাচনে ৩০ বছর পর জাতীয় পার্টি এসেছে, আমরা জয়ের চেয়েও বড় কথা হচ্ছে মানুষের কাছে জাতীয় পার্টির নামটি পৌঁছে দিচ্ছি যে আমরা আছি।

ভোলা-২ (দৌলতখান-বোরহানউদ্দীন) আসনে আলী আজম মুকুল নৌকা প্রতীকের প্রার্থী। তার প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ কংগ্রেসের ডাব প্রতীকে আসাদুজ্জামান, জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) বাইসাইকেল প্রতীকে গজনবী, তরিকত ফেডারেশনের ফুলের মালা প্রতীকে শাহেনশাহ মো. শামসুদ্দিন মিয়া। বর্তমান সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুল ছাড়া বাকি প্রার্থীদের এলাকায় যেমন কেউ চেনন না তেমনি নির্বাচনের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতাও নেই। ফলে এই আসনে আলী আজম মুকুলের জয় নিশ্চিত।

ভোলা-৩ (লালমোহন-তজুমদ্দিন) আসনে নৌকার প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ কংগ্রেসের ডাব প্রতীক নিয়ে আলমগীর, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল নিয়ে কামাল উদ্দিন এবং স্বতন্ত্র ঈগল পাখি প্রতীকে জসিম উদ্দিন। এই আসনেও নুরুন্নবী চৌধুরীর শক্ত প্রতিপক্ষ নেই।

ভোলা-৪ (চরফ্যাশন-মনপুরা) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব। তার প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র মাথাল প্রতীকে আবুল ফয়েজ, এনপিপির আম নিয়ে আলাউদ্দিন, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল নিয়ে মিজানুর রহমান ও তৃণমূল বিএনপির সোনালী আঁশ নিয়ে মো. হানিফ। এখানেও নিশ্চিত জয় নুরুন্নবী চৌধুরীর।

বরগুনা-২ (বেতাগী-বামনা-পাথরঘাটা) আসনে নৌকা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাবেক সংসদ সদস্যের স্ত্রী সুলতানা নাদিরা। তিনি ছাড়া অন্য প্রার্থীরা সকলেই এলাকায় অপরিচিত ও ভোটের লড়াইয়ে অক্ষম। ওই আসনে অন্য প্রার্থীরা হলেন- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের নোঙর প্রতীকে ড. আব্দুর রহমান, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির একতারা প্রতীকে আবু বকর সিদ্দিক, তৃণমূল বিএনপির সোনালী আঁশ প্রতীকে কামরুজ্জামান লিটন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ডাব প্রতীক নিয়ে মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের ফুলের মালা প্রতীকে শাহ মো. আবুল কালাম। এই আসনে নিশ্চিত জয় আওয়ামী লীগের।
পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনে নৌকা প্রতীকে লড়ছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আ.স.ম ফিরোজ। তার প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল বিএনপির সোনালী আঁশ প্রতীকে মাহবুবুল আলম, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের টেলিভিশন প্রতীকে জোবায়ের হোসেন ও জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে মহসীন হাওলাদার। পটুয়াখালীর বাকি দুটি আসনে ভোটের লড়াই হলেও এই আসনে নির্ভাবনায় আওয়ামী লীগ।

বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে নৌকা প্রতীকের হেভিওয়েট প্রার্থী আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের ছেরনিয়াবাত সেকেন্দার আলী ও ন্যাশনালস পিপলস পার্টি মনোনীত আম প্রতীকের মো. তুহিন।

ছেরনিয়াবাত সেকেন্দার ও তুহিন জানিয়েছেন, আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সক্ষমতা তাদের নেই। মূলত দল মনোনয়ন দিয়েছে দেখে নির্বাচনে রয়েছেন। এই আসনে নৌকার জয় সুনিশ্চিত।

ঝালকাঠি-২ (ঝালকাঠি-সদর-নলছিটি) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ১৪ দলের মুখপাত্র নৌকা প্রতীকের আমির হোসেন আমুর প্রতিদ্বন্দ্বী ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আম প্রতীকের ফোরকান হোসেন ও জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের নাসির উদ্দিন।
৯ আসনে ঝড়ের মুখে নৌকা

বরগুনা-১ (সদর-আমতলী-তালতলী) আসনে বারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। তার প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকে জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকু, স্বতন্ত্র ট্রাক প্রতীকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. খলিলুর রহমান এবং কাঁচি প্রতীকে আমতলী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গোলাম সরোয়ার ফোরকান। এই আসনে মোট সাড়ে চার লাখের মতো ভোটার রয়েছে।

যার মধ্যে আমতলী-তালতলী উপজেলায় আছে আড়াই লাখ। বাকি দুই লাখ সদরে। ভোটের হিসেবে আমতলীর সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম সরোয়ার ফোরকান একটি বড় ফ্যাক্টর। এছাড়া বাকি দুই আওয়ামী স্বতন্ত্র প্রার্থীও সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। ফলে নৌকা নিয়ে জয় পেতে ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর অনেকটা জটিল ও প্রতিকূল পথ পারি দিতে হবে। এই আসনে এনপিপির আম প্রতীকে মাহবুবুর রহমান, স্বতন্ত্র কেটলি প্রতীকে নূরুল ইসলাম, তৃণমূল বিএনপির সোনালী আঁশ প্রতীকে ইউনুস সোহাগ, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে খলিলুর রহমান, জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের নোঙর প্রতীকে মাসুদ কামাল, তরিকত ফেডারেশনের ফুলের মালা প্রতীকে শাহ মো. আবুল কালাম নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন।

পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য এসএম শাহজাদা। তার প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের টেলিভিশন প্রতীকে এওয়াইএম কামরুল ইসলাম, এনপিপির আম প্রতীকে ছাইফুর রহমান, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে নজরুল ইসলাম ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির একতারা প্রতীকে নূরে আলম এবং স্বতন্ত্র ঈগল প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হোসেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হোসেন নৌকার নিশ্চিত জয়ের সামনে বড় বাধা। ইতোমধ্যে জনসমর্থনে অনেকটা এগিয়েছেন আবুল হোসেন। ফলে লড়াই না করে এসএম শাহজাদা সহজেই জয় পাচ্ছেন না।
পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মহিববুর রহমান। তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান তালুকদার। তিনি কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি। ফলে দলীয় নেতাকর্মী ইতোমধ্যে নৌকা প্রতীক বাদ দিয়ে দলীয় নেতার পক্ষে নির্বাচনের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এতে আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুর রহমান তালুকদারকে হটিয়ে সহজেই জয় পাবেন নৌকা প্রতীকের মহিববুর রহমান- এটা অকপটে বলা যাচ্ছে না। এই আসনে অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা হলেন- স্বতন্ত্র ট্রাক প্রতীকের আব্দুল্লাহ আল ইসলাম লিটন, জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের আব্দুল মান্নান হাওলাদার, বাংলাদেশ কংগ্রেস মনোনীত ডাব প্রতীকের জাহাঙ্গীর হোসাইন ও জাসদের মশাল প্রতীকে বিশ্বাস শিহাব পারভেজ মিঠু। যারা তুলনামূলক সমর্থকহীন প্রার্থী।

বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের শরিক ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তিনি ইতোমধ্যে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন। ওই আসনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর ওপরই শতভাগ ভরসা করতে হচ্ছে ওয়াকার্স পার্টির এই নেতাকে। অথচ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল ওই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা মনিরুল ইসলামের ঢেঁকি প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে সরব। তাছাড়া আরেক আওয়ামী লীগ নেতা শের-ই-বাংলার নাতি এ.কে ফাইয়াজুল হক ঈগল প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে। তাকে সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছেন নৌকার মনোনয়ন না পাওয়া বর্তমান সংসদ সদস্য শাহে আলম।
প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী নকুল কুমার বিশ্বাসও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের গামছা প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে। মেননের বিপক্ষে এই তিন প্রার্থীই ভোট টানবেন। যার মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী দুজনেই বড় বাধা মেননের নিশ্চিত জয়ের সামনে। এই আসনে আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তৃণমূল বিএনপির সোনালী আঁশ প্রতীকে শাহজাহান সিরাজ, জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকে ইকবাল হোসেন তাপস ও এনপিপির আম প্রতীকে সাহেব আলী।

বরিশাল-৫ (সদর) আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। তার শক্ত প্রতিপক্ষ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ আদালতের ফয়সালার অপেক্ষায় থাকায় তিনি কিছুটা ফুরফুরে মেজাজে থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাউদ্দিন রিপন সমর্থনে এগিয়েছেন অনেক। রিপনও নৌকার মনোনয়ন চেয়েছিলেন। না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে মাঠে নেমেছেন।
স্থানীয়ভাবে গুঞ্জন রয়েছে- সাদিক আব্দুল্লাহ ভোটে ফিরতে না পারলে তার সমর্থকদের রিপনের হয়ে কাজ করার নির্দেশ দেবেন। শেষ পর্যন্ত রিপনকে নিয়ে ঝুঁকি নেবেন সাদিক। আবর সাদিক ভোটে ফিরতে পারলে একেবারেই জয় অনিশ্চিত হয়ে পড়বে জাহিদ ফারুকের। ফলে নৌকার প্রতিপক্ষ এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী। অন্য প্রার্থীদের মধ্যে এনপিপি মনোনীত আম প্রতীকের আব্দুল হান্নান সিকদার, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ডাব প্রতীকের মাহাতাব হোসেন, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটোর ছড়ি প্রতীকে আসাদুজ্জামান, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের ইকবাল হোসেন তাপস ভোটের মাঠে নিষ্ক্রিয়।

বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হাফিজ মল্লিক। সাবেক এই সেনা কর্মকর্তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শামসুল আলম চুন্নু। এই আসনেই জাতীয় পার্টির প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য নাসরিন জাহান রতনা। আরও সাতজন প্রার্থী রয়েছেন এই আসনে। তবে নৌকাকে সবচেয়ে বেশি ভোগাবে আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী শামসুল আলম। তার সাথে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কাজ করছে। ফলে  নৌকার প্রার্থী অনেকটা একলা চলো নীতিতে নির্বাচনের বৈতরণী পার হচ্ছেন।
নৌকা ছাড়া চার আসন

বিভাগের ২১টি সংসদীয় আসনের চারটিতে নৌকা মনোনীত প্রার্থী নেই। এর মধ্যে বরিশাল-৩, পিরোজপুর-৩ ও পটুয়াখালী-১ জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বরিশাল-৪ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী দিলেও সাবেক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা বর্তমান সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথের আপত্তিতে প্রার্থিতা হারান আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ।

এই চারটির মধ্যে বরিশাল-৪ (মেহেন্দীগঞ্জ-হিজলা) আসনে শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী পঙ্কজ নাথের জয় অনেকটা নিশ্চিত। পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনে জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের মাশরেকুল আজম রবি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বর্তমান সংসদ সদস্য ডা. রুস্তুম আলী ফরাজী। রুস্তুম ফরাজী সংসদীয় এলাকায় বেশ জনপ্রিয় এবং সমর্থক রয়েছে। বিপরীতে জাতীয় পার্টির মাশরেকুল আজম রবি তুলনামূলক নতুন প্রার্থী। এছাড়া এনপিপির আম নিয়ে আমির হোসেন, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের ছড়ি নিয়ে জাসেম মিয়া, তরিকত ফেডারেশনের ফুলের মালা নিয়ে শহিদুল ইসলাম,কল্যাণ পার্টির হাতঘড়ি নিয়ে শহিদুল ইসলাম স্বপন, স্বতন্ত্র কলার ছড়ি প্রতীকে শামীম শাহনেওয়াজ ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের ডাব প্রতীকে হোসাইন মোসারেফ সাকু নতুনও কর্মী-সমর্থকে পিছিয়ে। ফলে এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী রুস্তুম ফরাজী জয়ের ব্যাপারে এগিয়ে।

পটুয়াখালী-১ (পটুয়াখালী সদর-মির্জাগঞ্জ-দুমকী) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী না দেওয়ায় প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছেন জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। তার প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন জাসদের মশাল প্রতীকের কে.এম আনোয়ারুজ্জামান মিয়া, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের ছড়ি প্রতীকে মহিউদ্দিন মামুন, তরিকত ফেডারেশনের ফুলের মালা প্রতীকে মো. খলিল, এনপিপি আম প্রতীকে নজরুল ইসলাম ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের ডাব প্রতীক নিয়ে নাসির উদ্দিন তালুকদার। রুহুল আমিনের সামনে অন্য প্রার্থীরা নতুন এবং অনভিজ্ঞ। ফলে এই আসনে জাতীয় পার্টির রুহুল আমিনের জয় অনেকটা নিশ্চিত।

বরিশাল-৩ (মুলাদী-বাবুগঞ্জ) আসনে নৌকার প্রার্থী না দিলেও এই আসনে ত্রিমুখী লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে গোলাম কিবরিয়া টিপু, ওয়ার্কার্স পার্টির হাতুড়ি প্রতীকে টিপু সুলতান ও স্বতন্ত্র ট্রাক প্রতীক নিয়ে সাবেক যুবমৈত্রী নেতা আতিকুর রহমানের মধ্যে ভোটের লড়াই হতে পারে। অন্য প্রার্থীদের মধ্যে ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল হক, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের ছড়ি প্রতীক নিয়ে আজমুল হাসান জিহাদ, তৃণমূল বিএনপির সোনালী আঁশ প্রতীক নিয়ে শাহানাজ হোসেন নতুন প্রার্থী হওয়ায় ভোটের মূল লড়াইয়ে যেতে পারবেন না বলে ধারণা ভোটারদের।

Back to top button