নগর খবর ডেস্ক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার শেষ সময় চলছে। ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসছে উত্তাপ যেন ততই বাড়ছে। টান টান উত্তেজনায় ভোটের মাঠ গরম করে রেখেছেন প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা।
রাজবাড়ীর দুইটি আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের পাশাপাশি নির্বাচনে মাঠে রয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও। এদিক থেকে রাজবাড়ী-২ আসনের নৌকার প্রার্থী ঝুঁকিতে না থাকলেও রাজবাড়ী-১ আসনের নৌকার প্রার্থী ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে মনে করছেন রাজবাড়ী-১ আসনের সাধারণ ভোটার, নির্বাচন বিশ্লেষক ও সচেতন নাগরিক।
রাজবাড়ী-১ (সদর ও গোয়ালন্দ) আসনে ৫ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও রাজবাড়ী-১ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কাজী কেরামত আলী। তিনি এই আসন থেকে ৫ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন রাজবাড়ী সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইমদাদুল হক বিশ্বাস। তিনি রাজবাড়ী সদর উপজেলার ৪ বারের উপজেলা চেয়ারম্যান। তিনি এবার ট্রাক প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এছাড়া এই আসনে জাতীয় পার্টি থেকে লাঙল প্রতীক নিয়ে হাবিবুর রহমান বাচ্চু, তৃণমূল বিএনপির সোনালী আঁশ প্রতীক নিয়ে ডিএম মজিবুর রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীক নিয়ে স্বপন সরকার ও
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঢেঁকি প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন আব্দুল মান্নান মুসল্লি। এই আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকার সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকের অ্যাডভোকেট ইমদাদুল হক বিশ্বাসের।
জানা গেছে, রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি মরহুম ওহাব আলী বিশ্বাসের উত্তরসুরী অ্যাডভোকেট ইমদাদুল হক বিশ্বাস উপজেলা পরিষদ প্রতিষ্ঠার পর ১৯৮৫, ১৯৯০ ও ২০০৯ সালের পর পর তিনটি নির্বাচনে রাজবাড়ী সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের ৪র্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর নিকট পরাজিত হন। জনকল্যাণ মূলককাজে সাধারণ জনগণের মধ্যে তার জনপ্রিয়তার জন্য তিনি ২০১৯ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চতুর্থবার উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন। রাজনীতির বাইরে তিনি রাজবাড়ী টাউন হল কমিটি, জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, রাজবাড়ী রাইফেল ক্লাব ও কুষ্টিয়া লালন একাডেমির আজীবন সদস্য এবং দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দে তার জনপ্রিয়তা রয়েছে ভালো। এবার তিনি সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করে সংসদ সদস্য নির্বাচন করেছেন। প্রচার প্রচারণা ও গণসংযোগে তিনি ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন। আলোচনায় এখন তিনি সবার উপরে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র থেকে প্রার্থী হয়েছেন অ্যাডভোকেট ইমদাদুল হক বিশ্বাস।তিনি প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই ব্যাপক গণসংযোগ, প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন। তার প্রতিটি গণসংযোগে ব্যাপক কর্মী সমর্থকদের উপস্থিত দেখা গেছে। তিনি ভোটের মাঠে ভালো সাড়া পাচ্ছেন। রাজবাড়ী-১ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর হোঁচট খাওয়ার আলোচনা-সমালোচনায় মেতে উঠতে দেখা গেছে চায়ের দোকান, হাট বাজারে।
রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দ উপজেলা নিয়ে রাজবাড়ী-১ আসন গঠিত। দুইটি পৌরসভা ও ১৮ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত রাজবাড়ী-১ আসন। এই আসনে মোট ভোটার আছেন ৪ লাখ ৪ হাজার ১৮১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৪ হাজার ২৬০ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৯৯ হাজার ৯১৫ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৬ জন। ভোটাররা নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করবেন, নাকি এই আসনের পরিবর্তনের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজবাড়ী সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ইমদাদুল হক বিশ্বাসকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন তা জানতে অপেক্ষায় থাকতে হবে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত।
রাজবাড়ি-১ সংসদীয় আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ চৌধুরী, ১৯৯২ সালে উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাজী কেরামত আলী নির্বাচিত হয়। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিএনপির জাহানারা বেগম বিজয়ী হয়।১৯৯৬ এর জুনে আবার কাজী কেরামত আলী জয়লাভ করেন। তবে বিএনপির সাংগঠনিক শক্তিও কম নয় এই আসনে। ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম বিজয়ী হয়। কিন্তু ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারেনি। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের মাধ্যম আসনটি ফের আওয়ামী লীগের দখলে চলে আসে। এরপর ২০১৪ সালে ও সর্বশেষ ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের কাজী কেরামত আলী পুনরায় নির্বাচিত হন।
গোয়ালন্দ উপজেলার কয়েকজন ভোটারদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, ১৫ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। এই আসন থেকে কাজী কেরামত আলী আওয়ামী লীগের থেকে বার বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য। কিন্তু তিনি দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থেকেও রাজবাড়ীর জন্য তেমন কোনো উন্নয়ন করতে পারেননি। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া পদ্মা সেতু, গোয়ালন্দ উপজেলার নদী ভাঙন মানুষের পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান তৈরি, পদ্মা সেতু চালু হবার পর দৌলতদিয়া ঘাট কেন্দ্রিক বেকার হয়ে যাওয়া ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান তৈরি, জেলায় একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করতে পারেননি। তাই এই অঞ্চলের মানুষ এখন পরিবর্তন চাচ্ছে।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার কয়েকজন ভোটারদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, কাজী কেরামত আলী বার বার এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও জেলার অবকাঠামোগত তেমন কোনো উন্নয়ন করতে পারেননি তিনি। জেলায় একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ইপিজেড, সরকারি পলিটেকনিক, পর্যটনকেন্দ্র করতে পারেননি। একজন সংসদ সদস্য পরপর ৩ বার ক্ষমতায় থেকে জেলার অবকাঠামোগত উন্নয়ন না করতে পারলে এটা তার জন্য ব্যর্থতা। তাই এই আসনে এবার পরিবর্তন দেখতে চাই।