থমকে যাচ্ছে দেশের থিয়েটার চর্চা
তাহিয়া বিনতে ইকবাল: স্বাধীন বাংলাদেশে যেসব শিল্পমাধ্যম সবচেয়ে উৎকর্ষ সাধন করছে তার মধ্যে ‘থিয়েটার’ প্রথম সারির দিকে। থিয়েটার মুলত একাধিক শিপ্লের সংমিশ্রিত রুপ। কারণ শুধু মাত্র অভিনয় ছাড়াও নৃত্য, সংগীত বাদ্যযন্ত্রের অদ্ভুৎ সমন্বয় এর মধ্যে। এজন্য থিয়েটারকে যৌথ শিল্প হিসেবেও সজ্ঞায়িত করা যায়।
নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশের টেলিভিশন নাটকে অভিনয়শিল্পি তৈরীর জন্য মঞ্চ নাটক ছিলো বড় ক্ষেত্র। একটা সময় টেলিভিশন নাটকে যারা অভিনয় করেছেন তারা উঠে এসেছেন এই থিয়েটার থেকেই।একটা সময় মঞ্চটায় ছিলো বাংলাদেশের নাটকের প্রান। তবে বর্তমানে মঞ্চ নাটকের প্রতি তরুণ অভিনয় শিল্পীদের আগ্রহ কমে গেছে। তাদের দাবী নগর কেন্দ্রিক ব্যাস্ততায় থিয়েটারকে নিয়মিত সময় দিতে পারেন না তারা। যার কারণে থিয়েটার চর্চা থমকে যাচ্ছে ক্রমেই।
নিয়মিত থিয়েটার চর্চার পরিবর্তে প্রদর্শনী কেন্দ্রিক মহড়ায় অংশগ্রহণ বেশি অভিনয় শিল্পীদের। কারণ হিসেবে নাট্যকর্মীদের কথায় উঠে আসছদ যে প্রযুক্তির উন্নয়নে নানা মাধ্যমে সময় ব্যয়, নগরকেন্দ্রিক ব্যস্ততা, যানজট,পেশাদারত্বের সুযোগ না থাকা, এক এলাকার কেন্দ্রিক থিয়েটার হল সহ নানা ব্যপার। তাদের মতে মঞ্চ নাটকের অভাবে অভিনয় কর্মীদের প্রশিক্ষণের জায়গাটা হারিয়ে যাচ্ছে এবং নতুন ছেলে মেয়েরা অভিনয়ে আসছে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়া। নতুন শিল্পী তৈরী হচ্ছে না একই সাথে পরিশ্রমী শিল্পীরও অভাব দেখা দিচ্ছে।
বর্তমান থিয়েটারের অবস্থা সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং নাট্য নির্দেশক ও পরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন ‘ আমরা যদি পেশাদার অবস্থান ঠিক রাখতে পারতাম তাহলে লোকজন আমাদের নাটক দেখতে আসতেন। সত্তর বা আশির দশকে মঞ্চনাটকের প্রভাব অনেক ছিলো কিন্তু তখনকার চর্চাটা এখন আর নেই। পেশাদার কণ্ঠশিল্পী বা নৃত্যশিল্পীরা সকালে ঘুম থেকে উঠে নিয়ম করে তিন চার ঘন্টা রেওয়াজ করেম কিন্তু আমাদের থিয়েটার কর্মীদের সেই সময় নেই’।
নাট্যকর্মীরা বলছে আমাদের দেশের নাট্যচর্চার সবচেয়ে দুর্বলতা হচ্ছে আমরা এখনো থিয়েটারে পেশাদারিত্ব সৃষ্টি হয়নি। অথচ উন্নত বিশ্বে একজন শিল্পী থিয়েটার করেই জীবিকা নির্বাহ করছে। কিন্তু আমাদের দেশের একজন থিয়েটারকর্মী থিয়েটার করে শুধু প্রানের টানে। তারপরও আশার কথা আমাদের থিয়েটার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটা শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। তার কারণ, আমাদের থিয়েটার চর্চার মুল শক্তি তারুণ্য এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা। এবং আমাদের এই তারণ্যনির্ভর নাট্যচর্চা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রশংসিত হচ্ছে।