f
ঢাকারাজনীতিসারাদেশসোশ্যাল মিডিয়ায়

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবার বাখরখানি

রুমন পারভেজ: বাখরখানি, পুরান ঢাকার এক অনন্য ও ঐতিহ্যবাহী খাবার। যা মুঘল শাসনামল থেকে শুরু করে আজও সমান জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে। এটি মূলত এক ধরনের মিষ্টি এবং খাস্তা রুটি। যা তার সুমিষ্ট স্বাদ এবং খাস্তা টেক্সচারের জন্য সবার কাছে পরিচিত। ময়দা, চিনি, ঘি, এবং দুধ দিয়ে তৈরি এই রুটির মধ্যে মিষ্টি, নরম এবং খাস্তা গুণাবলীর অনন্য সমন্বয় রয়েছে, যা পুরান ঢাকার খাবারের স্বাদ ও ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।

বাখরখানির উৎপত্তি নিয়ে বেশ কিছু ঐতিহাসিক কাহিনি প্রচলিত রয়েছে। কথিত আছে, কাশ্মীরের একজন নারী বাখর খান নামের এক সেনাপতির প্রতি ভালোবাসা থেকে এই মিষ্টি রুটির আবিষ্কার করেন। এরপর এটি মুঘল আমলে ভারতীয় উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং পুরান ঢাকায় এসে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে। মুঘল শাসনামলে যখন ঢাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক বিনিময় বেড়েছিল, তখনই বাখরখানি ঢাকার ঐতিহ্যে রূপান্তরিত হয়। এ খাবারটি বিশেষত পুরান ঢাকার নাজিরাবাজার, চকবাজার এবং এর আশপাশের এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয়।

বাখরখানি তৈরি বেশ সময়সাপেক্ষ এবং ধৈর্যের কাজ। প্রথমে ময়দা, দুধ, ঘি এবং চিনি দিয়ে একটি নরম ময়দা তৈরি করা হয়। এরপর এই ময়দা বিশেষ কায়দায় লেয়ার করে বেলে নেওয়া হয়, যা বাখরখানির খাস্তা টেক্সচারের জন্য জরুরি। ময়দাকে বারবার লেয়ার করা এবং বিশেষভাবে গড়ে নেওয়ার পর এটি বেক করা হয়, ফলে রুটির বাইরের অংশ খাস্তা এবং ভেতরের অংশ তুলতুলে নরম হয়। কখনো কখনো বাখরখানিতে গোলাপজল বা এলাচের স্বাদ যোগ করা হয়, যা এটিকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলে।

বাখরখানি শুধুমাত্র একটি খাবার নয় এটি পুরান ঢাকার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, এবং ইতিহাসের অংশ। বিয়ে, ঈদ, ইফতার পার্টি বা অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানে বাখরখানি যেন এক অপরিহার্য উপাদান। পুরান ঢাকার মানুষদের কাছে এই খাবারটি অতীত স্মৃতির একটি অংশ। যা তাদের ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রেখেছে। বিশেষ করে রমজান মাসে ইফতারে বাখরখানির কদর বেড়ে যায়, আর পুরান ঢাকার চকবাজারে এর চাহিদা থাকে তুঙ্গে।

বাখরখানির ঐতিহ্য পুরান ঢাকায় সীমাবদ্ধ থাকলেও, বর্তমানে এটি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এবং এমনকি দেশের বাইরেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেক বড় শহর ও মফস্বলে বাখরখানির দোকান দেখা যায়, এবং ঢাকার বাইরে থেকেও মানুষ পুরান ঢাকার আসল বাখরখানির স্বাদ নিতে আসেন।

বাখরখানির জনপ্রিয়তা আজও অটুট রয়েছে। কারণ এটি শুধুই একটি রুটি নয় এটি একটি স্মৃতি, ঐতিহ্য এবং প্রজন্মান্তরের সংযোগ।

Back to top button