বাউফলে শিক্ষকদের কল দিয়ে এনআইডিসহ দেখা করতে বলছে পুলিশ!
নগর খবর ডেস্ক : বাউফলে কলেজ, মাদরাসা, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে ফোন দিয়ে বিভিন্ন তথ্য এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে থানায় দেখা করতে বলছে পুলিশ। এ ঘটনায় শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, কেউ কেউ এতে বিব্রত হচ্ছেন। আবার কেউ কেউ আতঙ্কিত হয়েছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের জন্য চূড়ান্ত হয়েছেন এমন শিক্ষকদের কাছে পুলিশ ফোন দিচ্ছে এবং নানা ধরনের প্রশ্ন করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একটি মাদরাসার এক শিক্ষক বলেন, আমি প্রিজাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে বিগত কয়েকটি নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেছেন। আমাকে ফোন করে বলে, বাউফল থানা থেকে বলছি। আপনার নাম কি? আপনি নির্বাচনের দায়িত্বে পড়েছেন। আপনি কোন দল করেন? আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে থানায় দেখা করবেন। পরে সত্যতা যাছাই করার জন্য খোঁজ নিয়ে জানলাম তিনি আসলেই থানার একজন সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই)। এভাবে ফোন দেওয়ায় আমি বিব্রত হয়েছি। নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করার ইচ্ছে আমার নেই।
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষক বলেন, আমি বিগত একটি নির্বাচনে সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। আমাকে বাউফল থানার পুলিশ পরিচয়ে ফোন করে বলেন, আপনি (শিক্ষক) পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। আপনি কোন দল করেন? আপনার পরিবার কি করে? ইত্যাদি। আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে থানায় দেখা করবেন। এ ঘটনায় আমিও বিব্রতবোধ করছি। এ রকম অন্তত ৩০ জন শিক্ষককে পুলিশের ফোন দেওয়ার বিষয়ে তিনি জানেন।
এক কলেজ শিক্ষক বলেন, আমাদের সম্পর্কে যদি কিছু জানার থাকে, তা গোপনে জানবে। কিন্তু ফোন দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে থানায় যেতে বলবে। এটা অসৌজন্যতা।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির বাউফল উপজেলা শাখার সভাপতি কামরুজ্জামান খান ফিরোজ বলেন, আমাকে অন্তত ৩৫ জন শিক্ষক বিষয়টি জানিয়েছেন। পুলিশ ফোন দেওয়ায় তাদের মধ্যে ভয় কাজ করছে। পাশাপাশি তারা বিব্রতও হয়েছেন।
বাউফল থানা পুলিশের এক পুলিশ কর্মকর্তা শিক্ষকদের ফোন দেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, নির্বাচনে যেসব শিক্ষক দায়িত্ব পালন করবেন, তাদের বিষয়ে খোঁজ নিতে তাকেও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে ওই শিক্ষেকদের কে, কোন দায়িত্ব পালন করবেন তা বলা হচ্ছে না। জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি নিয়ে থানায় দেখা করতে বলা হয়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বশির গাজী বলেন, এ জাতীয় কোনো নির্দেশনা কাউকে দেওয়া হয়নি। আর কে কোন দায়িত্ব পালন করবেন তা এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি। বিষয়টি আমি জানার পর বাউফল থানার ওসিকে জানিয়েছি।
বাউফল থানা পুলিশের ওসি শোনিত কুমার গায়েন বলেন, আমি গত শনিবার (৯ ডিসেম্বর) এ থানায় যোগদান করেছি। এ ঘটনা ঘটেছে আমার যোগদানের আগে। নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে আর কোনো শিক্ষককে কোনো ফোন দেওয়া হবে না।