f
সারাদেশ

ময়মনসিংহ সদরে ট্রাকের দাপটে ঝুঁকিতে নৌকা

নগর খবর ডেস্ক : ময়মনসিংহের ১১টি আসনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন হিসেবে বিবেচনা করা হয় ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনটিকে। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই জমজমাট প্রচার শুরু হয়েছে এ আসনে। বিভিন্ন উপায়ে প্রচার ছাড়াও মতবিনিময় ও ভোটারদের কাছে গিয়ে প্রার্থীরা নিজেদের নির্বাচনী অঙ্গীকার তুলে ধরছেন। স্থানীয় ভোটাররাও বেশ আগ্রহী এই নির্বাচন নিয়ে। ফলে এক ধরনের উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে নির্বাচনকে ঘিরে।

গত দুইটি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ছাড়ে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ ছিলেন আসনটির সংসদ সদস্য। তবে এবার দলীয় কোন্দলে রওশন নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় ভাগ্য খুলেছে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্তর। প্রয়াত বাবা সাবেক ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমানের রাজনৈতিক অবদানের বদৌলতে প্রথমবার দলের মনোনয়ন চেয়েই শান্ত পেয়ে গেছেন নৌকা।

তবে নৌকা মার্কা নিয়েও স্বস্তিতে নেই শান্ত। তার বিপরীতে ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি আমিনুল হক শামীম। তিনি ময়মনসিংহ সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটুর বড় ভাই। ব্যবসায়ী ও পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের মাঝে নিজের শক্তিশালী অবস্থানের পাশাপাশি ছোট ভাই মেয়র টিটুর বিশাল কর্মীবাহিনী, সিটিতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা শামীমের পক্ষে সহায়ক হিসেবে কাজ করছে। এতে করে নৌকা পেয়েও বেশ ঝুঁকির মুখে পড়েছেন প্রথমবার নির্বাচনের লড়াইয়ে নামা মোহিত উর রহমান শান্ত।

এ ছাড়া জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ নেতাই স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীমের পক্ষে কাজ করছেন। নৌকার প্রার্থী শান্তর পক্ষে হাতেগোনা কয়েকজন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতা কাজ করছেন এবং প্রচারে অংশ নিচ্ছেন। রাজনৈতিকভাবেও তাই বেকায়দায় আছেন শান্ত।

স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল হকের পক্ষে মাঠে নেমেছে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলসহ কমিটির পদধারী নেতাদের একাংশ, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফ হোসাইন, জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মামুন আরিফ, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ফারুক হোসেন, আবু বক্কর সিদ্দিক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক রিপন, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক শাহীনুর রহমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ুন কবীর হিমেল, সদর উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রাশেদুজ্জামান রোমান, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আল আমিন, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর, মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক নওশেল আহমেদ অনি, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি অনুপম সাহা, সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল হাসান, আনন্দ মোহন কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক শেখ সজল, যুগ্ম আহ্বায়ক ওমর ইসলাম, সদর ছাত্রলীগের সভাপতি নাসির উদ্দিন হিরা, যুব মহিলা লীগসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদধারীসহ বেশিরভাগ নেতা ও তাদের অনুসারীরাও নেমেছেন আমিনুল হকের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে।

দলীয় পদে থেকে নৌকার বিপক্ষে কাজ করার ব্যাপারে বেশ কিছু কারণ সামনে এনেছেন এসব নেতাকর্মীরা। নেতা হিসেবে নৌকার প্রার্থী জনবান্ধব নয়, এলাকায় থাকেন না এবং এলাকার উন্নয়নে তার কোনো অবদান নেই। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম এ অঞ্চলের ব্যবসায়ী, শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষের পাশে থেকেছেন যে কোনো প্রয়োজনে। করোনাকালেও তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এ ছাড়া সিটি মেয়র হিসেবে তার ভাইয়ের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ভোটের মাঠে তাকে এগিয়ে রাখছে বলে মনে করেন নেতাকর্মীরা।

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল বলেন, ‘নির্বাচনে কার পক্ষে কাজ করতে হবে কিংবা করা যাবে না এমন কোনো বাধা আমাদের নেই। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা বলে দিয়েছেন যার যা ইচ্ছা তাই করতে। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। নির্বাচনে জনগণ যাকে ভোট দিবে সেই জয়লাভ করবে।’

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী মোহিত উর রহমানের পক্ষে প্রকাশ্যে মাঠে নেমেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুর রাজ্জাক, ফারুক আহমেদ খান, মমতাজ উদ্দিন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউসুফ খান পাঠান, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের কিছু অংশ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি উত্তম চক্রবর্তী রকেটসহ সহযোগী সংগঠনের গুটি কয়েক গুরুত্বপূর্ণ নেতাকর্মী।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা পাশে না থাকার বিষয়টিকে আদর্শের বিচ্যুতি হিসেবে দেখছেন নৌকার প্রার্থী মোহিত উর রহমান শান্ত। তিনি বলেন, যে কোনো প্রার্থীর পক্ষে কারো অবস্থান নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু নৌকা হচ্ছে শেখ হাসিনার মার্কা। আজকে যারা ট্রাক প্রতীকের পক্ষে কথা বলছেন বুঝতে হবে তারা নৌকার বিপক্ষে কাজ করছেন।

নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে মনে করেন না জানিয়ে শান্ত আরও বলেন, নৌকার ভোট বিভাজিত করার ক্ষমতা কারও নেই। সে ক্ষেত্রে আমি শঙ্কামুক্ত।

স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল হক শামীম বলেন, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বেশিরভাগ নেতাকর্মীই আমার পক্ষে কাজ করছে। যারা আমাকে ভালোবাসে তারাই আমার পক্ষে কাজ করতে মাঠে নেমেছেন। ট্রাক প্রতীকের জোয়ার উঠেছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমাকে ভোট দিতে ভোটাররা কেন্দ্রে যাবে। আশা করি, সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে বিজয়ী হব।

নির্বাচনে সহিংসতার আশঙ্কা নিয়ে বলেন, এমনটি আশঙ্কা করছি না। তবে আমার নির্বাচনী কেন্দ্রে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, ক্যাম্পে আমার ব্যানার খুলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ব্যানার লাগানো হয়েছে। চেষ্টা করছি যেন কোনো সংঘাত না হয়। কিন্তু আমার প্রতিপক্ষ যদি এ ধরনের আচরণ বারংবার করতে থাকে সেক্ষেত্রে এটি বলা মুশকিল।

নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে তিনি আরও বলেন, সারা দেশের সঙ্গে তুলনা করলে উন্নয়নে ময়মনসিংহ পিছিয়ে আছে। প্রথমেই সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে কাজ করব। ময়মনসিংহের সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়ন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য খাত ও কর্মসংস্থানের ওপর গুরুত্ব দিব। তৃণমূল মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে নির্বাচন করছি তাই ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি, ভোটাররাও উৎফুল্লু। এ আসনে আওয়ামী লীগের কোনো এমপি না থাকায় এ জনপদে যথাযথ উন্নয়ন হয়নি। আমি নির্বাচিত হলে ময়মনসিংহ সদরসহ পুরো জেলার উন্নয়নে কাজ করব।

তবে দুই প্রার্থীকেই ওজনদার হিসেবে দেখছেন স্থানীয় ভোটাররা। নগরীর ধোপাখোলা এলাকার ভোটার মাহমুদ হোসেন বলেন, দুজনই বেশ শক্ত প্রার্থী। সুষ্ঠু ভোট হলে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। সচেতন নাগরিকরা মার্কা নয়, প্রার্থী দেখেই ভোট দিবে।

এই আসনে স্বতন্ত্র হিসেবে মাঠে আছেন বিএনপির সাবেক এমপি দেলোয়ার হোসেন খান দুলু। যদিও দীর্ঘদিন ধরেই দলে তিনি নিষ্ক্রিয় ও জনবিচ্ছিন্ন। আর জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়েছেন আবু মূসা সরকার। মাইকিং ও পোস্টারের মাধ্যমে নগরীতে তাদের প্রচার দেখা গেছে। এ ছাড়া বাকি ছয়টি দলের প্রার্থীদের প্রচার বা কার্যক্রম চলছে নামে মাত্র।

 

 

 

Back to top button