নিজস্ব প্রতিবেদক: ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বাগমারায় আওয়ামী লীগের একাংশের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় জাকিরুল ইসলাম সান্টুকেই একক প্রার্থী মনোনীত করা হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
যদিও ওই মিটিংয়ে আরেক প্রভাবশালী প্রার্থী শ্রীপুর ইউপি চেয়ারমান মকবুল হোসেন মৃধা নিজের প্রার্থীতার বিষয়ে অনড় থাকেন। শেষ পর্যন্ত নেতা কর্মীদের অনুরোধ ও চাপের কাছে তিনি নতি স্বীকার করতে বাধ্য হন এবং শেষমেষ নিজের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন।
মকবুল হোসেন মৃধার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেওয়ায় ধারনা করা যাচ্ছে, জাকিরুল ইসলাম সান্টু উপজেলা চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী হলে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে পারেন বলে দলের একাধিক নেতা কর্মীদের সূত্রে জানা গেছে।
দলের নেতা কর্মীরা বলছেন এখানে জাকিরুল ইসলাম সান্টুকে দলের একাংশের দলীয় প্রার্থী মনোনীত করা হলে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার সম্ভাবনা ছিল দলের আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী শ্রীপুর ইউপি চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন মৃধা। শেষ পর্যন্ত মকবুল হোসেন মৃধা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে সান্টুর জন্য চেয়ারম্যান হওয়ার সুযোগ এক ধাপ এগিয়ে যায়। এছাড়া আওয়ামী লীগের আরেক অংশের সভাপতি দাবীদার সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের নেতৃত্বাধীন আরেক প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা মতিউর রহমান টুকুর প্রার্থী হওয়ার আভাস পাওয়া গেলেও শেষ পর্যন্ত তিনি নির্বাচনে আসবেন না বলে জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে মতিউর রহমান টুকু সানশাইনকে জানান, আমি উপজেলা চেয়ারম্যান ভোটে যাওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তা স্থগিত করেছি। দলীয় কারণে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
দলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, মতিউর রহমান টুকু অনেক ভেবেচিন্তে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মতিউর রহমান টুকু বিদ্রোহী প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের কাঁচি প্রতীক নিয়ে ভোট করে বিতর্কিত এবং কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। ওই নির্বাচনে এনামুল হক দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের রোষানল ও হামলার শিকার হয়ে নির্বাচনী মাঠে কোনঠাসা হয়ে পড়েন। তেমনি এবারের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হলে মতিউর রহমান টুকুর ভাগ্যে একই পরিনতির শিকার হওয়ার আশঙ্কা থেকেই এবার মতিউর রহমান টুকু শুরুতেই নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন।
এছাড়া এই নির্বাচনে জাকিরুল ইসলাম সান্টু ছাড়া আর যে দুজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেছেন তারা হলেন সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাছিমা খাতুন ও উপজেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক ও এক সময়ের আত্মসমর্পনকৃত চরমপন্থী ক্যাডার আব্দুর রাজ্জাক সরকার ওরফে আর্ট বাবু। দলের নেতা কর্মীরা বলেছেন এই দুজন প্রার্থী সান্টুর প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার নূন্যমত যোগ্যতাও রাখে না। নাছিমা খাতুনের আগে চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থী না থাকায় সামান্য ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন।
এবার তিনি মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দাঁড়ালে নিশ্চিত পরাজিত হবেন জেনে নিজের মান রক্ষার্থে হোমজিক্যালি ভাবে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। আসলে তিনি কোন ইউনিয়ন চেয়াম্যান তো দূরের কথা সামান্য মেম্বার ভোট করেও জিততে পারবেন না। দলীয় নেতা কর্মীরা বলছেন এসব কারণে শেষ পর্যন্ত নাছিমা খাতুন নির্বাচন থেকে সরেই দাঁড়াতে পারেন। আর নির্বাচনে টিকে থাকার মত তার তেমন অর্থ কড়িও নেই।
এদিকে দলীয় নেতা কর্মী ছাড়াও সাধারণ ভোটার ও আপমর বাগমারাবাসীর মনে আট বাবুকে নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। দলীয় নেতা কর্মীরা বলছেন, আত্মসমর্পন করে অন্ধকার পথ ছেড়ে আলোর পথে আসলেও আর্ট বাবুর হাত রক্তে রঞ্জিত। আট বাবুর বিরুদ্ধে রয়েছে প্রায় ডজন খানেক হত্যা মামলা।
তাহেরপুর পৌরসভার প্রতিষ্ঠাতা বর্তমান সাংসদ অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদের শ্বশুর ও বর্তমান পৌর মেয়র শায়লা খন্দকারের পিতা মরহুম শহীদ আলো খন্দকার সহ বাগমারার একাধিক জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড এই আর্ট বাবু। যাকে দলে এনে পদপদবী দিয়ে লালন-পালন করে চলেছেন এনামুল হক।
নেতাকর্মীদের মতে, আলোচিত হত্যাকন্ড সহ নানান বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে আর্টবাবুর মনোনয়ন শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। হটাৎ রাজনীতিতে আবির্ভাব ও উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুর রাজ্জাক সরকার ওরফে আর্ট বাবু বলেন, কোন মামলাই এখন পর্যন্ত আমি দোষী সাব্যস্ত হয়নি।
অনেকগুলো মামলা খারিজ হয়ে গেছে। সুতারং আইনের চোখে আমি অপরাধী নই। দলের মতামত নিয়ে আমি প্রার্থী হয়েছি। কোন দলের মতামত নিয়ে প্রার্থী হলেন প্রশ্নে তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের। আমার নেতা ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক। তিনি এখনও বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। আর্ট বাবুর এমন দাবীকে দলের অনেক নেতাকর্মীরা হাস্যকর বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন।
দলের অনেক প্রবীন নেতারা বলেছেন, বাগমারার রাজনৈতিক মসনদে রয়েছেন অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ। তাঁর দক্ষিণ হস্ত হিসাবে রয়েছেন জাকিরুল ইসলাম সান্টু। এর আগে তাহেরপুর পৌরসভার উপনির্বাচনে এই আবুল কালামের কারিসমাটিক নেতৃত্বের কারণে নির্বাচন ছাড়াই সিলেকসনের মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ পৌর পরিষদ গঠিত হয়। তেমনি ভাবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সিলেকসনের মাধ্যমে উপজেলা পরিষদের নেতৃত্ব নির্ধারিত হতে পারে বলে ধারনা করছেন দলের অনেক শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।
এদিকে সম্প্রতি আওয়ামী লীগের দলীয় সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক একক প্রার্থী হয়েছেন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাকিরুল ইসলাম সান্টু। এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ গোলাম সারোয়ার আবুল জানান, কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মোতাবেক এখানে দলীয় ভাবে কাউকে প্রার্থী হিসাবে ঘোষনা করার সুযোগ নেই। তবে আমরা আন্তরিক ভাবে সিনিয়র নেতা এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হিসাবে জাকিরুল ইসলাম সান্টুকেই সমর্থন দিয়েছি। সান্টুকে বিজয়ী করতে আমরা সর্বাত্নক চেষ্টা চালিয়ে যাব।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২১ এপ্রিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ এবং প্রত্যাহারের শেষ তারিখ আগামী ৩১ এপ্রিল। ২০ এপ্রিল শনিবার পর্যন্ত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মাত্র তিনজন প্রাথী মনোনয়নপত্র জমা দিলেও চেয়ারম্যান ও পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে কোন মনোনয়নপত্র জমা পড়েনি।
আজ রবিবার শেষ দিনে জমা পড়বে অবশিষ্টগুলো। তবে ৩০ এপ্রিল প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত জানা যাবে বাগমারায় উপজেলা চেয়ারম্যান ভোট আদৌ হবে নাকি বিনা ভোটেই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন।