নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীতে এক বিএনপিকর্মীর বিরুদ্ধে মাদ্রাসার মালিকানাধীন একটি বাড়ি দখলে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। তিনি ইতোমধ্যে বাড়ির একটি ঘর দখলেও নিয়েছেন। নগরের চণ্ডিপুর এলাকার জামিয়া সিদ্দিকিয়া মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ তুলেছে।
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) দুপুরে নগরের একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি আবু তাহের দাবি করেন, দানসূত্রে পাওয়া এ বাড়ি দখলের চেষ্টা চলছিল আগে থেকেই। আওয়ামী সরকারের পতনের পর গত ২২ আগস্ট ওই বিএনপিকর্মী বাড়ির একটি ঘর দখল করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১৯৯৭ সালে কুলসুম খাতুন নামের এক নারী ৭৯ নম্বর সপুরা মৌজার আরএস ৪৪২২ ও ৪৪২৩ নম্বর দাগের ০.০৩৯৭ একর জমি মুহতামিম জামিয়া সিদ্দিকিয়া মাদ্রাসাকে দান করেন। এর দলিল নম্বর- ৩০৪২। জমিটি দান করার সময় সেখানে দুটি ঘর ছিল। পরবর্তীতে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আরও দুটি টিনশেড ঘর নির্মাণ করে। এই বাড়ির হোল্ডিং নম্বর-১৫। ঘরগুলো ভাড়া দিয়ে যে টাকা পাওয়া তা মাদ্রাসার এতিম ও দুস্থ ছাত্রদের জন্য ব্যয় করা হয়। গত ২২ আগস্ট দুপুরে সপুরা গোরস্থানপাড়া এলাকার সাইদুল ইসলাম কটা (৭০) ও তার ছেলে বিএনপিকর্মী শাওনসহ (২৫) অজ্ঞাত কয়েকজন ব্যক্তি বাড়ির সামনে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের টাঙানো সাইনবোর্ড ভাঙচুর করেন। তারা বাড়ির ভাড়াটিয়াকে বাড়ি ছাড়ার জন্য হুমকি দেন। এরপর তারা একটি ঘর খালি করে নিজেদের কিছু মালপত্র রেখে ঘরটি দখল করেন। এ ঘটনায় বোয়ালিয়া থানা ও জেলা প্রশাসক বরাবর পৃথক লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু মাদ্রসার বাড়ি দখলমুক্ত করতে এখনও পর্যন্ত কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
অধ্যক্ষ মুফতি আবু তাহের বলেন, ‘সাইদুল ইসলাম কটা দীর্ঘদিন ধরেই মাদ্রাসার এই বাড়ি দখল করার চেষ্টা করছেন। তিনি দাবি করছেন, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে যে নারী জমি দান করেছেন, তার ওই জমিতে কোন স্বত্ত্ব নেই। অথচ এটি বার বার আদালতে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। এরপরও বার বার আপিল করেছেন সাইদুল ইসলাম। এখনও তার একটি আপিল মামলা চলমান। এটি নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই বাড়ি দখল করা হয়েছে। অধ্যক্ষ জানান, সাইদুল ২০০৫ সালের দিকে নিজের নামে এ জমির একটি দলিল তৈরি করেন। পরে তিনি অবৈধভাবে নাম খারিজও করে নেন ভূমি অফিস থেকে। বিষয়টি জানতে পেরে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ওই নামজারি কেসটি বাতিলের জন্য বোয়ালিয়া ভূমি অফিসে আবেদন করে। ২০১৩ সালের ১৫ মে বোয়ালিয়া ভূমি অফিসের তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) আফাজ উদ্দিন আবেদনের আদেশ দেন। এতে তিনি সাইদুলের নামজারি নামজারি কেসটি বাতিল করেন। ফলে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের ওই বাড়ির স্বত্ব বহাল থাকে।
এর আগে ২০১২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতের এক রায়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকেই জায়গার দখলকার হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং সাইদুল ইসলামকে ওই জায়গায় না যাওয়ার জন্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এ আদেশে সংক্ষুব্ধ হয়ে সাইদুল ইসলাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ ও বিশেষ জেলা জজ প্রথম আদালতে আপিল করেন। ২০১৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর আদালতের বিচারক শাহীদুল ইসলাম আজামী উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে আপিল আবেদন নামঞ্জুর করেন। আদালতের এ আদেশও মাদ্রাসার পক্ষে যায়।
এরপর গত বছরের ৫ ডিসেম্বর সাইদুল ইসলাম আবারও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের নামে থাকা নামজারি বাতিলের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) আদালতে আপিল করেন। তিনি এবার দাবি করেন, ওই সম্পত্তিতে সাইদুল ইসলামেরই বাড়ি আছে। এরপর আদালত মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে জবাব দেওয়ার জন্য নোটিশ দেন। আইনজীবীর মাধ্যমে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসেবে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ জবাবও দিয়েছে। এই আপিল এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ২২ আগস্ট সাইদুল ইসলাম ও তার বিএনপিকর্মী ছেলে ওই বাড়িতে গিয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের টাঙানো সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলে এবং একটি ঘর দখল করে।
অধ্যক্ষ মুফতি আবু তাহের আরও বলেন, ‘সাইদুল ইসলাম ও তার ছেলে শাওন আমাদের বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি দিচ্ছেন। ওই বাড়িতে গেলে প্রাণে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দিয়েছেন। এতে আমরা আতঙ্কিত রয়েছি। ভয়ে ওই বাড়িতে যেতে পারছি না। দানসূত্রে পাওয়া মাদ্রাসার মতো একটি ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাড়ি দখল হয়ে যেতে বসেছে। বাড়িটি দখল হয়ে গেলে মাদ্রাসার অপূরণীয় ক্ষতি হবে। মাদ্রাসার এতিম ও দুস্থ শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ তাই তিনি মাদ্রাসার বাড়ি রক্ষায় পুলিশ-প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন।
বাড়ি দখলের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাইদুল ইসলাম কটার ছেলে শাওন বলেন, ‘এই জমি আমাদের। আমাদের কাগজ আছে। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আওয়ামী লীগের ক্ষমতা দেখিয়ে ১৫ বছর ধরে জমি দখলে রেখেছিল। আমরা ইতোমধ্যে বসেছিলাম। সেখানে মাদ্রাসা কাগজ দেখাতে পারেনি। এরপরও তারা কেন সংবাদ সম্মেলন করল সেটা আমি বুঝলাম না।’